ছেলেটির নাম কেচোদাস। কে রেখেছিল এই নাম তা সে জানতো না।থাকতো রাস্তায় রাস্তায়।কখনো ভিক্ষা করতো আবার কখনো চুরিও করতো।রাস্তার ধারে কেউ প্রসাব করছে দেখলেই গিয়ে চাদা তুলতো আর চাদা দিতে না চাইলে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে পালাতো।কেচোদাসের বয়স ১২।তার চেয়ে বয়সে যারা ছোট এবং ভিক্ষা করে সে তাদের ওস্তাদ।নানা সময়ে তাদেরকে সে শেখায় কিভাবে ভিক্ষা করলে বেশি ভিক্ষা পাওয়া যায়।কেচো কিন্তু জানেইনা কে তার বাবা কে তার মা।
এলাকার মাস্তানদের সাথে ভালো খাতির ওর কিন্তু তার পরও তারা ওর ভিক্ষার টাকায় ভাগ বসায়।একদিন সে দেখে এক লোক রাস্তায় দাড়িয়ে প্রসাব করছে কাছে গিয়ে চাদা দাবী করে না দিলে পুলিশ ডাকবে।অনেকটা মায়ের কাছে মামা বাড়ির আবদার করার মত।যাকে সে পুলিশের ভয় দেখিয়েছিল সে নিজেই পুলিশ।অগত্যা ধরে নিয়ে যায় থানাতে এবং আচ্ছামত বকাঝকা করে।ছোট্ট কেচোদাসের করার কিছুই ছিলনা।
ঠিক এমন সময় ত্রাতার ভূমিকায় উপস্থিত হন উর্ধতন এক পুলিশ কর্মকর্তা।তিনি ওকে মাইরের হাত থেকে বাচান এবং তোমারতো এটা করা ঠিক হয়নি।তোমার বাবার কত নাম ছিল জানো?তার ছেলে হয়ে তুমি কিনা রাস্তায় চাদা তোলো!কেচোদাস নামের ছোট্ট ছেলেটি খুবই অবাক হয়।তারও যে বাবা আছেন বা ছিলেন তাইতো কখনো মনে হয়নি।
সে জানতে চায় আপনি আমার বাবাকে চেনেন? সেই ভালো পুলিশ অফিসার বললেন অবশ্যই চিনি।শুধু আমি কেন এই দেশের সবাই তাকে চেনে।এর পর তিনি পকেট থেকে একটা একশো টাকার নোট বের করে দেখালেন সেখানে যে ছবিটি আকা সেই লোকটিই কেচো নামের ছোট্ট ছেলেটির বাবা।তিনি মাহাত্মাগান্ধী।কেচো প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি তার পরও সে পুলিশের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।
এর আগে পুলিশের সেই অফিসার ওকে বলেছিল আমরা জানি তুমি কখন কোথায় কি করে বেড়াও কিন্তু কখনো তোমাকে কিছু বলিনা কারণ তোমার বাবা অনেক সম্মানীত ছিলেন।তাছাড়া তোমার বাবাকেতো শত্রুরা মেরে ফেলেছিল।তারা যদি জানতো তুমি বেচে আছো তবে তোমাকেও মেরে ফেলতো।এর পর কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললো তোমারতো টাকা দরকার তাই তুমি চাদা দাবী করো এই নাম টাকা।আরও লাগলে আমাকে বলো দেব।কিন্তু কেচো টাকা না নিয়ে বেরিয়ে যায়।
এলাকায় এক এনজিও দাদা আছেন যে ওদেরকে খুব ভালোবাসেন এবং বাচ্চাকাচ্চাকে পড়ান।কেচোদাস নামের ছোট্ট ছেলেটি গিয়ে তাকে সব বলে।সে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে হুবহু সেম টু সেম চেহারা।পুলিশের কাছে নিশ্চই তথ্য আছে।তুই গান্ধীজির ছেলে।
ছেলেটির আনন্দ আর দেখে কে।এতো দিন পর সে তার বাবার সন্ধান পেয়েছে।তারা বাবা এতো সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন আর সে কিনা কি সব করে বেড়ায়।সে বেরিয়ে পড়ে গোটা এলাকায় নিজের বাবাকে খুজে পাওয়ার সংবাদ দিতে।কেউ কেউ হাসাহাসিও করে ওকে নিয়ে বিশেষ করে ছোট্ট বাচ্চাগুলি যারা ওকে ওস্তাদ মানে।প্রথমে ওদেরকে খাওয়াতে চায় কিন্তু ওর কথা শুনে সবাই কটাখ্য করলে ও রেগেমেগে খাওয়াবেনা বলে দেয়।পরে অবশ্য মিলে মিশে খায় এবং গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ায়।
কেচোদাস নামের বার বছরের রাস্তার ছেলেটা রীতিমত সবাইকে গান্ধীজির ছেলে বলে পরিচয় দিতে থাকে।একদিন শহরের দামী স্কুলের গেটে দাড়িয়ে ও ভেলপুরি খাচ্ছিল সেটা দেখছিল স্কুলের বাউন্ডারির ভিতরে দাড়ানো ছোট্ট মেয়েটি।সে তার টিফিন বক্স এগিয়ে দিয়ে বললো এর মধ্যে স্যান্ডুইচ আছে নাও আমারতো আর ভেলপুরি নেই।
বন্ধুত্ব হয়ে যায় দুজনের মধ্যে এবং মেয়েটি বাড়িতে গিয়ে তার মাকে বলে জানো মা আজ গান্ধীজির ছেলে কেচোদাস গান্ধীর সাথে দেখা হয়েছিল সে আমার বন্ধু হয়ে গেছে!গান্ধীজির ছেলে কেচোদাস গান্ধী তাও আবার ছোট্ট মানুষ শুনে ওর মা বেশ অবাক হয়ে ওকে শিখিয়ে দিলেন কাল প্রশ্ন করবে গান্ধীজির বাবা মায়ের নাম কি? কেচোতো আর সেসব জানে না তাই ওকে যখন প্রশ্ন করা হলো তখন ও থতমত খেয়ে গেল এবং ছুটে গেলো এনজিও দাদার কাছে।এভাবেই চলতে থাকলো ওদের বন্ধুত্ব আর আড্ডা।
মেয়েটির নাম ছিল মিনি।একদিন সে স্কুল থেকে বাসায় না ফিরে কেচোদাসের সাথে ঘুরতে বের হলো ওদিকে বাসারসবাই চিন্তিত।ওই স্কুলের এক রাগী স্যার ছিলেন মিনির বাবার বন্ধু।সে তাকে ফোন করে বেশি কথা শুনিয়ে দিল।একদিন আড্ডার সময় তার হাতে ধরা পড়লো কেচোদাস।
মাইরও খেলো।সেদিন সে সিদ্ধান্ত নিলো সেও ওই স্কুলে পড়বে এবং ওই শিক্ষকের কাছেই পড়বে।এবার পথের ছেলে কেচোদাসের সাথে যুদ্ধে নেমে পড়লেন শহরের সেরা স্কুলের সেই শিক্ষক।তিনি কোন ভাবেই কেচোকে ওই স্কুলে ভর্তি হতে দেবেন না বলে যত ছলচাতুরি করা যায় সব করলেন।ওদিকে শর্ত অনুযায়ি কেচোদাসকে তার বাবা মায়ের বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে ভোটার কার্ড রেশন কার্ডও দিতে হবে।কিন্তু মাহাত্মাগান্ধীর ছবিতো সবাই চেনে কি করা যায়?
নাম পরিবর্তন করতে চাইলে কেচোদাস নামের বার বছরের ছেলেটি বেকে বসলো।শেষে মাহাত্মাগান্ধীর অল্পবয়সী ছবি ফটোশপ করে ভোটারকার্ড রেশন কার্ড করা হলো।এনজিও দাদার তত্তাবধানে ও পড়তে শুরু করলো এবং ভাইভাতে টিকে গেলো।এর পর লিখিত পরীক্ষা। সেই শিক্ষকের ষড়যন্ত্রের কারণে ওকে আলাদা একরুমে পরীক্ষা দিতে হলো।
পরীক্ষা শুরুর পাচ মিনিট আগে ওকে সেই শিক্ষক জানালেন তুমি যাকে নিজের বাবা বলে পরিচয় দিচ্ছ তিনিতো তোমার জন্মের ষাট বছর আগে মারা গেছেন তাহলে তিনি তোমার বাবা হলেন কি করে?ওর মন ভেঙ্গে দিলেন নিমিষেই।কেচোদাস মোহনদাস করমচাদ গান্ধী নাম নিয়ে সেই ছোট্ট কেচো কি তবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলো না? জানতে হলে দেখতে হবে “বাবার নাম গান্ধীজী” সিনেমাটি।
এটি একটি অন্যরকম সুন্দর সিনেমা।নাম ভূমিকায় সুরজিৎ নামের বার বছরের ছেলেটি যে অভিনয় করেছে বাংলা চলচ্চিত্রে বিশেষ করে শিশুতোষ চলচ্চিত্রে এর আগে এতো সুন্দর ও সাবলিল ভাবে কেউ অভিনয় করতে পারেনি।এমনকি অপু দুর্গাও নয়।পরিচালক পাভেলের জীবনের প্রথম সিনেমা হিসেবে এটিকে এক কথায় অসাধারণ বলা যায়।এনজিও দাদার ভুমিকায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যয় দারুন অভিনয় করেছেন।পরিবার নিয়ে দেখার মত একটি সিনেমা।
এই সিনেমায় অনেক কিছু শেখার আছে।অনেক মেসেজ আছে।যে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানের সাথে রাস্তার এক ভিখারীকে পড়তে দিবেনা বলে পিটিশান করেছিল তাদের মুখের উপর এমন একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিল কেচোদাস নামের ছেলেটি যা সবাইকে আরো গভীরভাবে ভাবতে শিখিয়েছে।আমার দৃষ্টিতে এই সিনেমাটি ১০ এ ৯ পাওয়ার যোগ্য।
–লেখাঃ জাজাফী
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
আরও পড়ুনঃ
সিনেমাটি দেখুন এখানে
Comments are closed.