আমার কোনো নাম নাই। তয় বৈজ্ঞানিকরা আমার নাম দিছে ক্যানিছ লুপাস ফ্যামিলিয়ারিস। শালার বৈজ্ঞানিক আর নাম পায় নাই। আর মাইনষে আমারে ডাকে কুকুর বা কুত্তা নামে। আমি মাইনষের কথা খুব একটা বুঝি না। হালারপুতেরা ফরেন ভাষায় কথা কয়। মাথার উপর দিয়া যায়। মজার ব্যাপার হ্যারাও আমার কথা বোঝে না। ঘেউ ঘেউ।
তিন বছর আগে আমার জন্ম হইছে প্রাইমারী স্কুলের পাশের গোডাউনটার নিচে। ওইটাই আমার বাসা। হোমল্যান্ড। মায়ে আর আমি থাকতাম। একদিন হঠাৎ কইরা সিটি কর্পোরেশনের লোকজন আইসা মায়েরে গলায় বেড়ী দিয়া মাইরা ফালাইল। আমি ছোট আছিলাম দেইখা আমারে মারে নাই। বাঁইচা থাকা খুব একটা সুবিধার না। মায়েরে মাঝেমধ্যে জিগাইতে মন চায়, মাইরা গেলে ক্যামন লাগে।
মাইরা যাওনের পর আবুইল্লার চায়ের কেটলীর গরম পানি পিঠে পড়লে কি ছ্যাকা লাগবো না? না লাগলে মইরা যাওয়া খুব একটা খারাপ না। তয় যেই ব্যাডায় মায়েরে মারছে তারে অলিগলি খুঁজি আমি। পাইলে ওস্তাদ জার্মান হন্ডের কসম! তার জায়গামত কামড় লাগামু ডাইরেক্ট। আবার ভাবি, আমি কি ওরে চিনবার পারুম। চেহারা মনে কয় পেরায় ভুইলাই গেছি! ধুরো। ঘেউ ঘেউ।
মাইনষে একটা ভুল কথা কয়। আমরা নাকি হাড্ডি পাইলে মহা খুশি। হালারা, গোশত তো জীবনেও দিবি না। হাড্ডি ছাড়া খাওনেরই বা কী আছে? তয় আমি সবই খাই পেরায়। খিদা পাইলে পলিথিনও চিবাই। আবুইল্লার চায়ের দোকানের নিচে খাড়াইলে উস্ঠা-লাথি খাইলেও মাঝেমধ্যে এক-দু পিস কেক-বিস্কুট জোটে। কাস্টমারের দিকে চাইয়া থাকলে কেউ কেউ দু-এক টুকরা পাউরুটিও ফিক্কা মারে। রিস্ক একটাই। হাই রিস্ক। আবুল্লার চায়ের কেটলীর গরম পানি ! ঘেউরে ঘেউ। হালার কুত্তা হইয়াও আরাম নাই। ইজ্জত নাই কুত্তাকুলে।
ইদানিং কয়ডা ফরেন কুত্তা মহল্লায়। মাইনষে গলায় দড়ি লাগায়া, কোলে কইরা হাঁটে। আদর করে। নাম ধইরা ডাকে। ওরে বাঙালী, ব্রিটিশ ভাগলেও তোরা বিদেশী কুত্তাগো মাথায় তুইলা রাখন ছাড়তে পারবি না ইহজনমে। হেইদিন এক পোস্ট-কলোনিয়ালিস্ট ফরেন কুত্তা আমারে দেইখাই চিল্লানি দিয়া কইলো আমি য্যান এইখানে না থাকি।
আমার জন্মও ক্ষুদিরামের মাটিতে। কইলাম- ‘এখন যদি তোরে ধরি বাঁচাইবো না কেউ ঘেউঘেউ , ঘেউঘেউ ঘেউঘেউ ।’ আমার একটা বুকের মধ্যে আক্ষেপ আছে । মাইনষে আমাগো তো সম্মান দিলোই না আর আশাও করিনা। তয় এতো ছোট চোখে ক্যান যে দেখে! কাউরে বাঘের বাচ্চা কইলে ফুইলা ওঠে আর কুত্তার বাচ্চা কইলে রাইগা ওঠে। হালার বাঘ কি একলাই এ্যানিমেল আর আমরা সব কদবেল? তোগো মার্ক্সিসম আর ক্যাপিটালিজমের এ্যায়ছি কি ত্যায়ছি।
ঘেউউ!! কয়দিন থেইকা শইলডা ভালা যাইতেছে না। মিষ্টির দোকানের সামনে সারাদিন হুইয়া থাকি। ঘুমাই। মাইক বাজাইলেও ঘুমের ডিশটাব হয় না। ল্যাঞ্জার মধ্যে পাও পড়লে ঘেউ কইয়া একবার তাকায়াই ফের চোখ বন্ধ করি। গত হপ্তায় একদিন ঘুমাইয়া আছিলাম। মনে হইল কেডা জানি কান ধইরা টান দিতাছে। ঘেউ কইতে গিয়া চোখ খুইলাই দেখি একটা ফুটফুইট্টা বাচ্চা। আমার দুই কান ধইরা কইতাছে ‘এ্যাই কুকু এ্যাই….।’
আমার চোখে পানি আইসা পড়ছিল। দিনে আমি নড়ি না ঐ দিনের পর। বাচ্চাটা মাঝেমধ্যেই আইসা গায়ে হাত দিয়া কয় ‘এ্যাই কুকু এ্যাই….।’
লেখকঃ ক্যাডেট,রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ।