সহপাঠীদের সাহসিকতায় বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেয়েছে সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী মিতু মালাকার (১৪)। এই প্রশংসনীয় কাজ করায় ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ২৭ জন শিক্ষার্থীকে গত ২৯ নভেম্বর 2016 মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পাওয়া মিতু মালাকারের পড়াশুনার খরচ দেওয়ার ঘোষণা দেন উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদার।
সহপাঠীদের সাহসিকতা
মিতুর সহপাঠী সোনালী সরকার ১৯ নভেম্বর বিকেলে গিয়েছিল তার এক আত্মীয়ের বাড়ি। সেখানে গিয়ে প্রতিবেশীদের মুখে জানতে পারে, মিতুর বিয়ে ঠিক হয়েছে ২১ নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যায়। বর নেত্রকোনার সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা এলাকার এক যুবক। ২০ নভেম্বর সকালে সোনালী বিদ্যালয়ে এসে তার বান্ধবী পপি দাসকে বিয়ের ঘটনাটি জানায়। পপি জানায় আরেক সহপাঠী হরি প্রিয়া সেনকে। ‘আমার সহপাঠীরা আমার বিয়ে বন্ধ করে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছে। আমি আরও লেখাপড়া করতে চাই।’
মিতুর সহপাঠীরা আলোচনা করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলামকে ঘটনাটি জানায়। হরি প্রিয়া সেনের নেতৃত্বে ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ২৭ জন শিক্ষার্থী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদারের কাছে এসে মিতুর বিয়ে বন্ধ করতে অনুরোধ করে। তখন চেয়ারম্যান বিয়ে বন্ধের আশ্বাস দেন।
এরপর বিকেলে সহপাঠীরা মিতুদের বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে তারা মিতুর সঙ্গে কথা বলে। তারা বিয়ে থামাতে মিতুর মা-বাবাকে একই অনুরোধ করে। ২০ নভেম্বর সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদার স্থানীয় এক ইউপি সদস্যকে মিতুদের বাড়িতে পাঠিয়ে তার বাবাকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে পাঠান। মিতুর বাবা ইউনিয়ন পরিষদে এসে বিয়ের আয়োজনের কথা স্বীকার করেন এবং এ জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। এমনকি তাঁর মেয়েকে ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেবেন না বলেও লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেন।
সোনালী সরকার বলে, ‘কী জানি কী হয়ে যায়, সেই ভয়ে এই বাল্যবিবাহের খবরটি প্রকাশ করতে পারছিলাম না। পরে ভাবলাম, যা হওয়ার হবে, তাই বলে বান্ধবীর জীবন তো আর ধ্বংস হতে দিতে পারি না। এ কথা ভেবে বান্ধবী পপিকে বিয়ের খবরটি জানিয়ে দিই।’
মধ্যনগর ইউপির চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদার বলেন, ‘ঘটনাটি সারা দেশের মানুষের কাছে অন্যতম একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। মিতুদের পরিবারটি খুবই দরিদ্র হওয়ায় আমি এখন থেকে তার ভবিষ্যতে লেখাপড়ার যাবতীয় ব্যয়ভার মেটানোর দায়িত্ব নিয়েছি।’
বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পাওয়া শিক্ষার্থী মিতু মালাকার জানায়, ‘আমার সহপাঠীরা আমার বিয়ে বন্ধ করে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছে। আমি আরও লেখাপড়া করতে চাই। আমার সহপাঠীদের কাছে আমি চিরঋণী।’
মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে খুবই অনুপ্রেরণা পেয়েছে। এর ফলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে এখন অনেকেই এগিয়ে আসবে বলে আমি মনে করি।’ তিনি এ জন্য উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।
গত ২১ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘বাল্যবিবাহ ঠেকাতে এগিয়ে এল সহপাঠীরা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।