শিশুদের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত খেলাধুলা ও গঠণমূলক বিনোদন। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, আবদ্ধ এই ঢাকা শহরে শিশুদের ছুটোছুটির জন্য পর্যাপ্ত মাঠ নেই, নেই কোনো প্রত্যহ বিনোদন ব্যবস্থা। তাই চার দেয়ালের মাঝে বন্দি থাকা শিশুটি হয়তো কম্পিউটার গেমস নাহয় টেলিভিষনকে খোলামাঠ ও খেলাধুলার স্থলাভিষিক্ত করে নিয়েছে। এটি শিশুর বিকাশের অন্তরায়। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে শিশুদেরকে নিয়ে অন্তত শুধু ছুটির দিনগুলোতে ঘুরতে যাওয়া অভিভাবকগণের পরম কর্তব্য।আপনার সন্তানকে যে দশটি যায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেন। এটি যেমন শিশুদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমকা রাখে, ঠিক তেমনই তাদের নিত্যদিনের একঘেয়েমি দূর করে প্রাণে আনে সতেজতা। চলুন ঘুরে আসি এই ঢাকা শহরেরই শিশুদের পছন্দের চমৎকার কিছু জায়গায়!
১। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুর
রাজধানী থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে গাজীপুরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহসড়কে পাশেই অবস্থিত এই বাঘের বাজার।অনেকটা দূর থেকেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের দৃষ্টিনন্দন ফটক। সেটি পেরুলেই সারি সারি ফুল গাছ, আপনাকে স্বাগত জানাবে বাঘ, সিংহ, বাজপাখি, ক্যাঙ্গারু। সাফারি পার্ক হচ্ছে বন্য প্রাণীর একপ্রকার অভয়ারণ্য। সাফারি পার্কে মানুষ থাকে বন্দি আর বন্যপাণীরা থাকে খোলা অবস্থায়। বাচ্চারা বিপুল উৎসাহের সাথে এসব পশু পাখিদেরকে দেখে, পরিচিত হয় পশুপাখিদের জগতের সাথে! তাদের কল্পনার রাজ্য ডালপালা ছড়াতে পারে এই সাফারি পার্কের সূত্র ধরে!
প্রাপ্তবয়স্ক জনপ্রতি পার্কে প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা এবং ১৮ বয়সীদের নিচে প্রবেশমূল্য ২০ টাকা। গাড়িতে করে সাফারি পার্ক পরিদর্শনের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিজনের টিকিট ১০০ টাকা। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা। প্যাডেল বোট ভ্রমণ ৩০ মিনিট ২০০ টাকা।
২। ফ্যান্টাসি কিংডম, আশুলিয়া
শিশুদের জন্য এক অন্যরকম স্বপ্নপুরী হলো ফ্যান্টাসি কিংডম। আশুলিয়ার জামগড়ায় অবস্থিত ফ্যান্টাসি কিংডম ছোট-বড় সকলের জন্য রোমাঞ্চকর আনন্দ উল্লাসের জায়গা। এখানে ওয়াটার কিংডমের আনন্দে সিক্ত হয় শিশুর একঘেয়ে শুষ্ক মন, এছাড়াও মজার মজার রোমাঞ্চকর সব রাইড বিলিয়ে দেয় শিশুদের মনে মুঠো মুঠো আনন্দ!
পার্কটি খোলা থাকে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। শিশুদের প্রবেশমূল্য ৩৫০-৫০০ টাকা, বড়দের বেলায় ৬৫০-৮০০ টাকা। ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে প্রবেশমূল্য ৬৫০-৮০০ টাকা। তবে ঈদের সময়টা বিশেষ অফারেও টিকিট বিক্রি করা হয়।
৩। নন্দন পার্ক, আশুলিয়া
শিশুদের বিনোদন-পিপাসা মেটানোতে একটি নান্দনিক স্থান হলো নন্দনপার্ক। সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা হাইওয়ের বাড়ইপাড়া এলাকায় বিদেশী রাইডের সমন্বয়ে নন্দন পার্কটি সাজানো। এখানেও রয়েছে পানির জগত, ওয়াটার ওয়ার্ল্ড! সবুজ ঘাসের গালিচা বিছানো সমগ্র পার্কটিতে। এখানে নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় পূর্ণতা পাবে শিশুর মননের চাহিদা!
নন্দন পার্ক খোলা থাকে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। সব রাইডসহ প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৪৯০ টাকা।
৪। ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক, সায়েদাবাদ
সায়েদাবাদের রেলক্রসিঙ্গ এর পশ্চিম পাশে ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক অবস্থিত। “এলিস ইন দা ওয়ান্ডারল্যান্ড” এর মতো কথা বলা পশু পাখি না থাকলেও, এখানে শিশুদের জন্য অবাক করে দেওয়া বিনোদন ব্যবস্থা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, এখানে আকর্ষনীয় সব রাইড ও খেলনার পাশাপাশি রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য আলোচনা সাপেক্ষে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা এবং পথ শিশুদের জন্যও আলোচনা সাপেক্ষে বিশেষ সুযোগ!
ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা। রাইডের মূল্য ৩০ টাকা।
৫। জাতীয় জাদুঘর, শাহবাগ
ছোটবেলায় “জাদুঘর” শুনে ভাবতাম, জাদুঘর বোধহয় জাদু দেখানোর ঘর। কিন্তু প্রথমবার জাদুঘরে গিয়ে আমার ভুল ভেঙেছিলো, কিছুটা হতাশও হয়েছিলাম। তবে শিশুদের জাদুঘরের ধারণা স্পষ্ট থাকলে আসলে হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। আমাদের জাতীয় জাদুঘরে বিশাল সেই ডায়নোসরের কঙ্কাল, মূর্তিমান বাঘ, হরিণ, ময়ূর সব মিলিয়ে শিশুকে বিস্ময়ে হতবাক তো করবেই, সাথে আছে শেখার মতো অনেক কিছু। শাহবাগে অবস্থিত এই জাদুঘর আমাদের দেশের ঐতিহ্য বহণ করে। তাই শিশুদেরকে নিয়ে জাতীয় যাদুঘরে ঘুরতে গেলেও কিন্তু মন্দ হয় না!
ঈদের সময় জাদুঘর খোলা থাকবে বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। টিকিটের মূল্য ৩ থেকে ১২ বছর বয়সীদের জন্য ৫ টাকা, ১২ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ১০ টাকা এবং বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য ৭৫ টাকা।
৬। শিশুপার্ক, শাহবাগ
শাহবাগে অবস্থিত শিশুপার্ক শিশুদের পছন্দনীয় সাশ্রয়ী পার্কগুলোর মধ্যে একটি। এখানে সবচাইতে ভালোলাগার বিষয়টি হলো, এখানে সপ্তাহে একটি দিন সুবিধাবঞ্চিত ও অসচ্ছল শিশুদের বিনামূল্যে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। এই স্থানটি শিশুরা উপভোগ করে ডানা মেলে উড়তে থাকা মুক্ত পাখির মতো! শিশুপার্কের উল্টোপাশে অবস্থিত রমনাপার্কও শিশুদের খেলাধুলা আর অবসর কাটানোর জন্য মন্দ না।
প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে শিশুদের জন্য ঈদ আয়োজন করে শিশুপার্ক কর্তৃপক্ষ। ঈদে শিশুপার্ক খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রবেশমূল্য ২০ টাকা। তবে প্রতিটি রাইডে উঠতে হলে ১০ টাকার আলাদা আলাদা টিকিট কাটতে হবে।
৭। জাতীয় চিড়িয়াখানা, মিরপুর
ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত চিড়িয়াখানা অনেক শিশুরই পছন্দের জায়গা। বইয়ের ছবিতে দেখা অবাক করা পশু পাখিগুলো বাস্তবে স্বচক্ষে চিড়িয়াখানায় দেখে শিশুরা! এটা নিঃসন্দেহে শিশুদের উল্লাসিত করে! শৈশবের দুরন্তপনার জন্য এটি একটি উপযোগী স্থান।
ঈদের সময় জাতীয় চিড়িয়াখানা খোলা থাকবে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। দুই বছর পর্যন্ত শিশুদের জন্য টিকিট লাগবে না।
৮। তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক, মিরপুর
তুরাগ নদীর পাড় ঘেষে ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক। নদীর স্নিগ্ধতা ও গাছগাছালির মনোরম পরিবেশে এটি ইট পাথরের জগতের বাইরের একটি স্থান, যা প্রফুল্ল করবে শিশুর হৃদয়কে। সবুজের সমারোহ ও গাছগাছালির সঙ্গে শিশুদের জন্য বিনোদনমূলক বিভিন্ন রাইডস এর ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। এছাড়াও এখানে ররয়েছে সাতার কাটার জন্য সুইমিং পুল!
প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা, প্রতিটি রাইডে ওঠার টিকিট জনপ্রতি ৪০ থেকে ৮০ টাকা। সুইমিংপুলে সাতার কাটার টিকিট জনপ্রতি ঘন্টায় ২০০ টাকা।
৯। ড্রিম হলিডে পার্ক
ঢাকা-সিলাট মহাসড়কে নরসিংদি জেলার পাঁচদোনায় এই স্বপ্নময় পার্কটি অবস্থিত। এখানে হিমালয় পাহাড়ের সদৃশ কৃত্রিম পাহাড়সহ পার্কময় জ্যান্ত ভূতদের আনাগোনা শিশুদের কল্পনার রাজ্যে নতুন দুয়ার খুলে দিতে পারে। এছাড়াও রয়েছে শিশুদের জন্য বিভিন্ন রাইড ও নানারকমের বিনোদন ব্যবস্থা।
ড্রিম হলিডে পার্কটি সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রতিদিন খোলা থাকে। পার্কে প্রবেশ মূল্য ২০০ টাকা।
১০। শিশু মেলা, শ্যামলী
“আরেক মেলা জগতজুড়ে,
ভাইরা মিলে, বোনরা মিলে,
রঙ কুড়িয়ে বেড়ায় তারা
নীল আকাশের অপার নীলে!”
এই জায়গাটাকে ধরে নিতা পারেন আহসান হাবীবের ছড়ার সেই শিশুদের মেলা! যেখানে শিশুরা রঙ কুড়িয়ে বেড়ায় অবিরত! ঢাকার শ্যামলীতে শিশুমেলা এখন ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড। এই শিশুমেলায় তাই শিশুদেরকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়াটা অবশ্যই বুদ্ধিমানের মতো কাজ।
শিশু মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা এবং প্রতিটি রাইড এর টিকিট ৩০ টাকা।
লেখকঃ মালিহা নামলাহ
Comments are closed.