সিনেমার মত ইয়াসিনের ঘরে ফেরা শিরোনামটি মনে করিয়ে দিবে কলকাতার অভিনেতা প্রসেনজিৎ অভিনিত বন্ধু সিনেমাটির কথা।সেই সিনেমার কথা মনে আছে আপনাদের? সিনেমাটি সব শ্রেণীর দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিল। ঘটনাটি ছিল এক পুলিশ অফিসার,তার স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে। ভালবেসে বিয়ে করার পর এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু প্রতারকদের প্রতারণায় স্বামীকে সন্দেহের চোখে দেখায় বিচ্ছেদ ঘটে দুজনের। শিশু পুত্রটিকে এক অর্থে গোপনে প্রসেনজিৎ নিয়ে বড় করতে থাকে। শুরু হয় বাবা ছেলের ভালবাসার অসাধারণ এক গল্প। এর পর এক ছুটিতে ছেলের জন্মদিন পালন করতে প্রতিবছর যেখানে যেত সেই রিসোর্টে গিয়ে বাচ্চাটির দেখা হয়ে যায় তার মায়ের সাথে। সে জানতো তার মা বেচে নেই আর মা জানতো তার সন্তান বেচে নেই।কিন্তু সে টের পায় বাচ্চাটি তার। বাবা প্রচন্ড শক্তিধর হওয়ায় আদালতে গড়ায় মামলাটি। আদালতের রায়ে ছেলেকে মা ফিরে পান।
সিনেমার এই কাহিনী এবার বাস্তবে দেখা মিললো।
সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের পর প্রায় সাত মাস বয়সী শিশু সৈয়দ ইয়াসিন আবদুল্লাহ ফিরলো মায়ের কোলে। আজ রোববার সকালে আপিল বিভাগ আদেশ দেন। আদেশ অনুসারে এ দিন বিকেলে শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁর মা তাসমিয়া হাসানের কাছে।
আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, এহসান আবদুল্লাহ ও তাসমিয়া হাসান দম্পতির মধ্যে মন-মালিন্য চলছিল। এর জের ধরে তাসমিয়া হাসান চলে যান বাবার বাড়ি গুলশানে, সঙ্গে নিয়ে যান শিশু ইয়াসিনকে (জন্ম: ২৮ এপ্রিল, ২০১৭)। গত ২৬ সেপ্টেম্বর টিকা দেওয়ার জন্য ছেলেকে নিয়ে গুলশানের ল্যাবএইড হাসপাতালে যান তাসমিয়া, সেখানে শিশুটিকে দেখতে যান তাঁর বাবা ও দাদি। একপর্যায়ে ইয়াসিনকে আদর করার কথা বলে মা তাসমিয়ার কাছ থেকে নিজ বাসায় নিয়ে যান বাবা। পরে মা তাসমিয়া ৩১ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সন্তানকে ফিরে পেতে তাসমিয়া মহিলা পরিষদের সাহায্য চান।
এরপর নিজের সন্তানকে ফিরে পেতে গত ২২ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তাসমিয়া। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৩ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। কেন শিশু ইয়াসিনকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না—তা রুলে জানতে চাওয়া হয়। পরে ইয়াসিনকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সুযোগ চেয়ে একটি সম্পূরক আবেদন করে তাসমিয়া, যা গত ৬ নভেম্বর হাইকোর্টে খারিজ হয়। খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে তাসমিয়া ৭ নভেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন করেন, যার ওপর আজ শুনানি হয়।
আইনজীবী সূত্র জানিয়েছে, আজ শুনানির একপর্যায়ে দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ খাস কামরায় মায়ের বক্তব্য শোনেন। উভয় পক্ষের আইনজীবীরা তখন উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে শিশুটির মায়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী, মোহাম্মদ আলী আজম খান এবং আইনুন নাহার সিদ্দিকা। শিশুটির বাবার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার। শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দেন।
পরে আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের দেওয়া রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিশু ইয়াসিন তাঁর মায়ের কাছে থাকবে বলে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। রোববার বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিশুটিকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে বাবা চাইলে এ সময়ে ইয়াসিনকে দেখতে যেতে পারবেন বলা হয়েছে। আদেশের পর বিকেল সোয়া চারটার দিকে আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদারের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের চেম্বারে দু’পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে শিশুটিকে তাঁর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
Comments are closed.