এক যে ছিলো সোনার গরু। “সবকিছু অন্ধকার থেকে আলোকিত মনে হচ্ছে!” ওহ! আচ্ছা। আমি আমার মায়ের পেট থেকে বের হয়েছি। এরা কারা? যারা আমাকে ধরে আছে? আমি মায়ের পেট থেকে কিভাবে বের হলাম? উফফ! কতো প্রশ্ন আমার। সব মাকে করব। নদীর পাড়ে মিয়াবড়ির বাগান পেড়িয়ে হাসেম মিয়ার বাড়ি। তার গোয়ালঘরে ৩টা গাভী জন্ম নিয়েছে। হাসেম মিয়ার ছোট ছেলে হাসুর সাথে বাছুরটির ভাব হয়ে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। তারা একসাথে মাঠে খেলতে যায়, মিয়া বাড়ির বাগান থেকে হাসু ফল চুরি করে খায়, আর বাছুরটি খায় পাতা। হাসু বাছুরটিকে আদর করে নাম দেয় “সোনার গরু”।দেখতে দেখতে হাসু বড় হয়, বড় হয় সোনার গরুও। হঠাত একদিন হাসু খুব মন খারাপ করে তার সোনার গরুর কাছে, তার গয়াল ঘরে আসে। সোনার গরু মানুষের ভাষা বুঝতো না, কিন্তু হাসুর ভাবভঙ্গি দেখে তার মনে কথা বুঝতে পারতো।
সোনার গরু হাসুর মন খারাপ দেখে হাসুর কাছে এসে তার মাথাটা হাসুর হাতের কাছে নেয়। হাসু সোনার গরুকে জরিয়ে ধরে বলে, “আমি পড়াশোনার জন্য শহরে যাচ্ছি, আর তোর সাথে খেলা হবে না আমার। সোনার গরু বুঝতে পেরে তারও চোখে পানি আসে। হাসু সেদিন সারারাত গোয়ালঘরে সোনার গরুর সাথে ছিলো। হাসু চলে যাওয়ার পর সোনার গরু একদম একা হয়ে যায়। সে মায়ের সাথে সারাদিন থাকে এবং মায়ের সাথে গল্প করে। একদিন হাসেম মিয়ার বাড়িতে একটা ট্রাকে করে ৪-৫টি গরু এবং কিছু লোক আসে এবং হাসেম মিয়া তাদেরকে সোনার গরু তুলে দেয়। সোনার গরু হাসেম মিয়ার ভক্ত। হাসেম মিয়া যাই বলে সোনার গরু তাই করে।সেইজন্য হাসেম মিয়া তাকে মা ছাড়া ট্রাকে তুলে দিলে সে কোনো জোর-জবরদস্তি করে না। কিছুক্ষণ পরপর ট্রাকে ২-৩ বা ৪-৫টা করে গরু বা মহিষ তোলা হচ্ছিল। ট্রাকে অল্প জায়গায় এত্তো বেশি গরু তোলা হয় যে তারা শুধু দাড়াতে পারছে, তাও ঠাসাঠাসি করে। রাত হয়ে গেলেও তারা একটু বসতে পারেনি। সারাটা রাস্তা তারা ঠাসাঠাসি করে দাড়িয়ে ছিলো। সোনার গরু আশেপাশের গরুর কাছে জানতে পারে যে তাদেরকে নেক কাজের জন্য শহরে নিয়ে যাচ্ছে। সে বুঝলো তাকে কুরবাণি করার জন্য শহরে হাটে নিয়ে চরা দামে বিক্রি করা হবে। কারণ তারা জানে তাদের সাথে কি করা হবে,কিন্তু তারা নেক আমল পাবে। রাস্তায় যাওয়ার সময় সোনার গরু ছোট বড় যানবাহন দেখে যা আগে কখনো দেখেনি। ট্রাকের সবার সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। যাওয়ার পথে তারা সোনার গরুকে সেগুলো বলে দেয়। যাওয়ার পথে গরুগুলোর খাবার ফুরিয়ে যায়। ট্রাকে যারা ছিলো তারা তাদেরকে ঠিকমতো খাবারটাও দিত না।
অবশেষে এতো ঠাসাঠাসি করে দাড়ানোর পর তাদেরকে ট্রাক থেকে নামানো হয়। সোনার গরু দেখলো তার পা দিয়ে আর হাঁটতে পারছে না। চারপায়ে তাদের সবার ঝিম ধরে গেছে। তাদেরকে একটি খামারে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যরকম একটি খামার। সোনার গরু এরকম কখনোই দেখে নি। খামারে তাদেরকে অন্যরকম খাবার দেওয়া হয়। আবার সুচালো সুঁইও ঢুকানো হয়। সুঁই ঢুকানোর পর সব গুলো গরু অলস হয়ে গেছে। সাতবার সুঁই ঢুকানোর পর আবার সোনার গরুকে ট্রাকে উঠানো হয়। এবারো ঠাসাঠাসি করে ঢুকানো হয় কিন্তু এবার গরু ছাগল একসাথে ঢুকানো হয় এবার আগের তুলনায় অল্প পথ। বিশাল মাঠে অনেকগুলো গরুর সাথে সোনার গরুকে বাধা হয়। প্রচন্ড রোদে সারাদিন গরুগুলোকে দাড় করিয়ে রাখা হয়। অনেক ধরনের মানুষ আসে সোনার গরুকে দেখতে। কেউ গরুর গলায় হাত দেয়, কেউ হাগু বের হওয়ার পাশের জায়গায়।সোনার গরুরু ঐ জায়গায় হাত দেওয়া একটুও পছন্দ না। শুধু মাথায় হাত দেওয়া পছন্দ। একদিন সোনার গরু হতভম্ব হয়ে গেল তার ছট বেলার খেলার সাথী হাসুকে দেখে। হাসুর সাথে অনেকগুলো তার বয়সী ছেলে ছিলো। সোনার গরু চিৎকার করলো, “হাসু! হাসু!” হাসুর কাছে আওয়াজটা পরিচিত মনে হলেও সে সোনার গরুর চেহারাটা চিনতে পারেনি। সোনার গরু অনেক উঁচু, লম্বা আর মোটা হয়ে গিয়েছে। হাসু সাথে সাথে সোনার গরুকে তার সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে পড়ে। হাসু তার বাবার উপর অনেক ক্ষেপে যায়। হাসু বিক্রেতার কাছ থেকে সোনার গরুকে কিনতে চাইলে বিক্রেতা তার সাধ্যের বাইরে দাম চায়। হাসুর বাবা যে দামে বিক্রি করেছিলো বিক্রেতা তার দশ গুন দাম চায়। হাসুর বন্ধুরা হাসুকে সাহায্য করে এবং হাসুর কাছে যা ছিলো তার সর্বোসব দিয়ে সোনার গরুকে কেনে তারা। কিন্তু সোনার গরুকে কেনার পর তাকে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া অনেক ঝামেলার কাজ। আর একদিন পর ঈদ। তাই হাসু সোনার গরুকে গ্রামে রাখার কোনো বন্দোবস্তই করতে পারলো না।
আপাতত হাসু যেই বাড়িতে ব্যাচেলর হিসেবে থাকে সেখানের গ্যারেজে সোনার গরুকে রাখে। গ্যারেজে তখন আরো কিছু গরু, বাছুর, ছাগল ছিলো। তাদেরকে আগামীকাল কুরবাণি করা হবে। কিন্তু সোনার গরু জানে না যে সে আগামীকাল নেক আমল করতে পারবে কিনা। হাসু চাঁদরাতের দিন সারারাত সোনার গরুর সাথে কাটিয়ে দিলো যেমন আগে গ্রামে থাকতে কাটাতো। হাসু ভাবলো, “আমি, সোনার গরু দুইজনই আল্লাহর সৃষ্টি। আমাদের দুজনকেই একদিন না একদিন মরতে হবে। আল্লাহর নির্দেশ মতো নিজের পোষা গবাদি পশু কুরবাণি দিলে কেন আমল অর্জিত হবে। আর সব থেকে বড় কথা ওটা আল্লাহর নির্দেশ। আমাকে এটা পালন করতেই হবে। আমাকে আমার ছোটবেলার খেলার সাথীকে আল্লাহর দরবারে কুরবাণী করতে হবে। আমার প্রিয় একজনকে আল্লাহয় দরবারে কুরবাণী করতে হবে।
অনুর্ধব আঠারো লেখক সন্ধ্যান, বিভাগঃ উচ্চ মাধ্যমিক।
নাম: সাবরিনা নুর নোভা , প্রতিষ্ঠান: মোহাম্মাদপুর প্রিপারেটরী স্কুল এন্ড কলেজ,
আরো পড়ুনঃ তাওহীদুল ইসলাম তাঈফ
Comments are closed.