লেখাঃ মদাদুল হক সরকার
ছোট বোনকে কোলে নিয়ে বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছে ৭ বছরের একটি শিশু । যে বয়সে পিঠে স্কুলব্যাগ থাকার কথা, সে বয়সে চোখে-মুখে আতঙ্ক নিয়ে নিজের আর ছোট বোনের জীবন বাঁচাতে পালাতে হচ্ছে তাকে। বলছি রোহিঙ্গা শিশুদের কথা। গত ২৫ আগস্ট সহিংসতার পরই শুরু হয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ওপর দমন পীড়ন ও জাতিগত নিধন অভিযান। রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় এর মধ্যে দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখনো রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা থামেনি। শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গার দুই তৃতীয়াংশই শিশু। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে কাটছে তাদের দিন।
গ্রামের দিগন্ত বিস্তৃত মনোরম পরিবেশ ফেলে আসা শিশুগুলোর জীবনে এখন স্বজন হারানোর বেদনা। তাছাড়া আশ্রয় নেওয়া শিশুদের ৮৫ শতাংশই সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় এড়াতে রোহিঙ্গা শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম চলছে এবং জরুরি চিকিত্সাসেবার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। রোদ-বৃষ্টিতে খালিগায়ে থাকা শিশুগুলো শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে শীতের প্রকোপ। হিম কুয়াশায় খোলা আকাশের নিচে পলিথিনের তাঁবুগুলোতে পড়বে তীব্র শীত। এ সময়ে যে হাজার হাজার শিশু রোগাক্রান্ত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
যে বয়সে একটি শিশু খেলাধুলা, দুরন্তপনা ও হাসি-আনন্দে কাটাবে দিন, সে বয়সে তার জীবনে নেমে আসছে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট। কতিপয় বিদ্রোহী সৈন্যের মাশুল কেন তাদের দিতে হবে?
দুর্বৃত্তরা এই শিশু-কিশোরদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের বর্তমানের হতাশ ও আপাত দম আটকানো পরিস্থিতি থেকে মুক্তির হাতছানি দিয়ে আরো অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। এহেন অধিকার বঞ্চিত শিশুদের ভবিষ্যতে অপরাধপ্রবণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাজেই জীবনের ঝুঁকি আর মানসিক ট্রমা নিয়ে কষ্টের মাঝে থাকা রোহিঙ্গা শিশুদের শক আর শোকের বিহ্বলতা দূরীকরণে শিক্ষা, অন্ন, বস্ত্র, চিত্তবিনোদনের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের জন্য গড়ে তুলতে হবে সুস্থ পরিবেশ।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
সুত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক