spot_img
More
    Homeসাহিত্যরাতুলের ইচ্ছে পূরণ

    রাতুলের ইচ্ছে পূরণ

    লেখাঃ লতা হামিদ

    খুব শীত পড়েছে।রাতুল লেপের মধ্যে বসে কম্পিউটারে গেমস খেলছে।গেমস খেলতে গিয়ে প্রায়ই রাত শেষ হয়ে যায়।এখন ভোর হয়ে এসেছে।কম্পিউটার বন্ধ করে বিছানা থেকে নামলো।কাঁচের মধ্যে দিয়ে দেখলো বাইরে কুয়াশা। কী মনে করে স্লাইডিং ডোর ঠেলে বাইরে বারান্দায় এলো। আহ ঠান্ডা!শিশির পড়ে শিক গুলো ভিজে গিয়েছে।পূর্ব আকাশে আলোর রং দেখা যাচ্ছে।পাখিরা কিচিরমিচির করে ভোরের আগমন বার্তা জানাচ্ছে। এতো সকাল রাতুল কখনো দেখেনি।সে তো গেমস খেলে এ সময় ঘুমাতে যায়।চারিদিকে চুপচাপ শান্ত।আস্তে আস্তে যেন প্রকৃতি জেগে উঠছে।রাতুল মুগ্ধ।ঠিক করলো এর পর থেকে সকাল হওয়া দেখবে।

    ও এখন ঘুমাতে যাবে।এখন ঘুমালে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে স্কুলের সময় পেরিয়ে যাবে। এ জন্য ওর স্কুলে যাওয়া হয়না। কিন্তু আজকের সকালটা ওর মন ভালো করে দিলো।ভাবলো আজ স্কুলে যাবে।

    রাতুল এবার ক্লাস টেনে উঠেছে।রেজাল্ট ভালো হয়নি।সে কি করবে।ওর যে পড়তে ভাল লাগেনা।বেশির ভাগই কম্পিউটারে গেমস খেলে।বাবা মা রেজাল্ট দেখে খুব মন খারাপ করেছে।রাতুল ঠিক করলো আজকের এই সুন্দর সকাল থেকে ও সবকিছু পাল্টে ফেলবে।বাবা মাকে ভালো রেজাল্ট করে দেখাবে।ওর বন্ধু বান্ধবও নেই।পড়াশোনায় ভালো কিন্তু পড়তে অনীহা।সব সময় কম্পিউটারে গেমস খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।রাতুল একটু ঘুমিয়ে নিয়ে উঠে পড়লো।মাকে বললো ও স্কুলে যাবে। মা অবাক হলো কিন্তু কিছু বললোনা। সাইকেলে বা বাসে করে সে স্কুলে যায়।একাই যেতে পারে।সাহসী।অন্য অনেক বন্ধুদের মতো মাকে নিয়ে স্কুলে যেতে হয় না।স্কুলে ও মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করলো। দু’টো ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করলো।বললো, আমরা এর পর একসাথে পড়ার ব্যাপার আলোচনা করবো।কিন্তু পড়তে গিয়ে ওর ভালো লাগলো না।ও ঠিক করলো কম্পিউটার গেমসে সময় কম দিয়ে ও ভালো ভালো গল্পের বই পড়বে। তাহলে ওর পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে।

    স্কুল থেকে ফিরে ও মাকে নিয়ে বই কিনতে গেলো। জাফর ইকবাল হুমায়ূন আহমেদ,মতি নন্দি, সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সহ উপেন্দ্রকিশোরের ছোটদের লেখা সে গল্পের বই কিনলো।ফেরার পথে দুটো কবুতর কিনে আনলো।একটা শখ থাকা ভালো।ছাদের উপর রাখার ব্যবস্থা করা হলো।কবুতরকে খেতে দিলো।এর মধ্যে কবুতরগুলোর জন্য মায়া লাগলো।

    বাসায় ফিরে ও পড়তে বসলো।বার বার ওর গেমসে মন যায়।ভাবলো তার থেকে গল্পের বই পড়া ভালো। ও গল্পের বই নিয়ে বসলো।গল্পের বই ওকে এক অজানা রাজ্যে নিয়ে গেলো।ও বিস্মিত, অভিভূত।এক বিশাল জগৎ যেন ওর সামনে খুলে গেল।রাতুলের জগতে বিস্ময়কর পরিবর্তন এলো। প্রতিদিন স্কুলে যায়,পড়াশোনা ঠিকমতো করে,বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেলে।ছুটির দিনে কবুতর নিয়ে খেলে।ওর কবুতর গুলো বাচ্চা দিয়েছে।মাঝে মাঝে সাইকেলে করে বেরিয়ে পড়ে।ছাদে ছোট একটা বাগান করেছে।তার পরিচর্যা করে।

    এসএসসি পরীক্ষা এগিয়ে এসেছে।তিনমাস বাকি।ঠিক করলো এই তিনমাস শুধুই পড়াশোনা।নিজে পড়ে, বন্ধুদের সাথেও পড়ে,ওকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে।উচ্চ শিক্ষা নিতে হবে।ওর দিনগুলো এখন অন্যরকম।কোন দুশ্চিন্তা ছাড়াই পরীক্ষা দিলো।পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে।পরীক্ষার পর কুয়াকাটা গিয়ে ঘুরে এলো।সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার ও এখন আর সারাক্ষণ কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকে না।

    মাঝে মাঝে ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করে,গল্পের বই পড়ে।ওর এখন প্রচুর বই।বই পড়াটা নেশা হয়ে গেছে।রেজাল্ট বের হলো। দেখা গেলো ও স্কুলের মধ্যে সব থেকে ভাল রেজাল্ট করেছে।টিচাররা, বন্ধুরা সবাই ওকে অভিনন্দন জানালো।মা বাবা খুশি,ও খুশি।পরিশ্রমের ফসল পেয়েছে।ঠিক সময় পড়াশোনা করেছে।মনটা আনন্দে ভরে গেল।

    আনন্দে গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠলো ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে’!

    ছোটদেরবন্ধু
    ছোটদেরবন্ধুhttps://www.chotoderbondhu.com
    সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখতে দেখতে জীবনের এক একটি দিন পার করা।সেই ধারাবাহিকতায় ছোটদেরবন্ধু গড়ে উঠছে তিল তিল করে।
    RELATED ARTICLES

    16 COMMENTS

    Comments are closed.

    Most Popular