প্রিয় বন্ধুরা,আমার ছোটবেলা থেকেই কৌতুহল ইলেকট্রনিক্স নিয়ে। আমি আমার সেই সব কৌতুহল থেকে যা কিছু শিখেছি তা সবার সাথে ধারাবাহিক ভাবে শেয়ার করতে চাই।সেই সব ইলেকট্রনিক্স এবং ইলেক্ট্রনিক্স প্রজেক্টের গল্প আশা করি সবার ভালো লাগবে।
মানুষ যখন গুনতে শিখলো তখন সভ্যতার দিকে সে একটা পদক্ষেপ নিলো। আজকের পৃথিবী আমরা সংখ্যা ছাড়া কল্পনাও করতে পারি না। কিন্তু আধুনিক এই গণনা পদ্ধতি বিকাশের জন্য হাজার হাজার বছর সময় লেগেছিল। প্রস্তুর যুগের মানুষ নুড়ি পাথরের সাহায্যে গণনা করতো ।আজকের মানুষ আধুনিক গণণার নাম দিয়েছে কম্পিউটার। কম্পিউটার একটা ইলেক্ট্রনিক্স পন্য। ইলেক্ট্রনিক্স শব্দটির সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। বর্তমান আমরা ইলেক্ট্রনিক্স ছাড়া একটি দিনও কল্পনা করতে পারি না। ইলেক্ট্রনিক্স পন্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পণ্য হলো ল্যাপটপ,মোবাইল,টেলিভিশন,ক্যালকুলেটর ইত্যাদি।
চলো আমরা প্রথমে জেনে আসি ইলেক্ট্রনিক্স কি? কেন এটাকে আমরা ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য বলি?
ভ্যাকুয়াম টিউবের মধ্য দিয়ে ইলেক্ট্রন ও হোল নির্গত করাকেই ইলেক্ট্রনিক্স বলা হয়। মূল কথা হলো, সেমিকন্ডাক্টরের মধ্য দিয়ে ইলেক্ট্রন প্রভাবিত করা। এটি বিদ্যুতের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া যা ইলেক্ট্রনিক্সের একটি বিশেষ নীতি এ জন্য এ সমস্ত পণ্যকে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য বলা হয়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে এই সেমিকন্ডাক্টর আসলে কি? সেমিকন্ডাক্টরের বাংলা রূপ হলো অর্ধপরিবাহী। এটি এমন একটি পদার্থ যার কন্ডাক্টিভিটি কন্ডাক্টরের তুলনায় কম এবং ইন্সুলেটরের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ এটি পরিবাহী না এবং অপরিবাহীও নয়। সেমিকন্ডাক্টরের রেজিস্ট্যান্স বা রোধ ০.৫ ওহম থেকে ৫০ ওহমের মধ্যে হয়ে থাকে। যেমন উদাহরণ স্বরুপ বলা যেতে পারে সিলিকন,জার্মেনিয়াম,কার্বন ইত্যাদি হলো সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী।
তোমরা নিশ্চই বুঝতে পেরেছ বিদ্যুৎ বা তড়িৎ প্রকৌশলের একটি শাখার হলো ইলেক্ট্রনিক্স। ১৯০৪ সালে জন অ্যামব্রোস ফ্রেমিং দুটি তড়িৎ ধারক বৈশিষ্ট্য সম্পুর্ন বদ্ধ কাঁচের এক প্রকার নল উদ্ভাবন করেন এবং তার মধ্য দিয়ে একমূখী তড়িৎ (ডিসি কারেন্ট) পাঠাতে সক্ষম হওয়ার পর থেকেই ইলেক্ট্রনিক্সের যাত্রা শুরু। এখন আমরা ইলেক্ট্রন আর হোল নামে যে দুটি শব্দ ব্যবহার করেছি তা সম্পর্কে জেনে নেই।
মৌলিক পদার্থের মধ্যে প্রধানত তিনটি কণিকা থাকে সেগুলো হলো ইলেক্ট্রন,প্রোটন এবং নিউট্রন।
ইলেক্ট্রন: কোন পরমাণুর যে সবকল ভ্যালেন্স ইলেক্ট্রন সমুহ নিউক্লিয়াস এর সাথে আলগা বন্ধনে আবদ্ধ থাকে তাকে ইলেক্ট্রন বলে। একে e দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটা নেগেটিভ চার্জ যুক্ত যা n type চার্জ বহন করে। এর চার্জ 1.6×10^-19 C
ওজন 9.1×10-31 kg
প্রোটন: ইলেক্ট্রনিক্স জগতে চার্জ ক্যারিয়ার বলতে ইলেক্ট্রন আর হোল এর কথাই বলা হয়। হোল পজেটিভ চার্জ বহন করে যা p type চার্জ ক্যারিয়ার। যাকে p দ্বারা প্রকাশ করে।
এর চার্জ 1.6×10^-19 c
এর ওজন 1.674×10^-27 kg
ইলেক্ট্রন চার্জ নিরপেক্ষ।
ইলেক্ট্রনিক্স এর প্রতিটি পণ্য ইলেক্ট্রিক্যাল এর উপর নির্ভর করে থাকে। ইলেক্ট্রিক্যাল এর উলেক্ট্রিসিটির একটি গুরুত্বপুর্ন অংশ। ইলেক্ট্রিক্যালকে প্রকৌশলীর জনক বলা হয়।
বিদ্যুৎ: বিদ্যুৎ এমন এক প্রকার অদৃশ্য শক্তি যা আলো,শব্দ,গতি ইত্যাদি শক্তিতে রুপান্তরিত করে বিভিন্ন বাস্তব কাজ সমাধান করে। অথবা বিদ্যুৎ হলো পদার্থের এমন একটি ধর্ম যা তড়িৎ আধানের ফল স্বরূপ সৃষ্টি হয়। এটা ফ্যারাডে আবিস্কার করেছেন। বিদ্যুৎ যেহেতু পদার্থের ধর্ম আর এই ধর্মের উপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
- পরিবাহী।
- অর্ধপরিবাহী।
- অপরিবাহী।
কারেন্ট ও ভোল্টেজ ইলেক্ট্রিক্যাল এর একটি গুরুত্বপুর্ণ অংশ যা পরিবাহীর ইলেক্ট্রড এর উপর নির্ভর করে।
- ভোল্টেজ:- পরিবাহীর পরমাণু গুলোর ইলেখ্ট্রন সমুহকে স্থানচ্যুত করতে করতে যে বল বা চাপের প্রয়োজন হয় তাকে বিদ্যুৎ চালক বা ভোল্টেজ বলা হয়। একে V দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এর একক ভোল্ট, এবং এই ভোল্ট পরিমাপ করা হয় ভোল্টামিটার দ্বারা যা মূলত সার্কিটের প্যারালালে সংযুক্ত থাকে। তোমরা জেনে থাকবে আলেসান্দ্রো ভোল্ট নামে এক বিজ্ঞানী (১৭৪৫-১৮২৭) প্রথম ব্যাটারি বা বিদ্যুৎ আবিস্কার করেন। ১৭৭৫ সালে ইলেক্ট্রোফোরাস আবিস্কার করেন যে থেকে স্থির বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। তার নামানুসারে বিদ্যুৎ বিভবের একক এর নাম রাখা হয়েছে ভোল্ট।
কারেন্ট: পদার্থের মধ্য দিয়ে ইলেক্ট্রন সমুহকে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হওয়ার হারকে কারেন্ট বলে। একে I দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটির একক অ্যাম্পিয়ার। আর জেনে রেখো অ্যাম্পিয়ার পরিমাপক যন্ত্রের নাশ অ্যামিটার।অ্যামিটার সিরিজে যুক্ত করতে হয়। তোমরা দেখবে বিভিন্ন কারখানাতে কিংবা যারা বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করে তাদের হাতে একটা ছোট্ট মেশিন থাকে যেটা দেখতে অনেকটা মোটর সাইকেলের মিটার বোর্ডের মত। বিদ্যুৎ ভোল্টেজ চেক করার সময় যেটার কাটা ওঠা নামা করে। এটিই মূলত অ্যামিটার।
অ্যাম্পিয়ার: কোন পরিবাহীর কোন অংশের মধ্য দিয়ে এক কুলম্ব চার্জ এক সেকেন্ড সময় ধরে প্রবাহিত হলে উক্ত পরিমাণ চার্জকে এক অ্যাম্পিয়ার বলে। এক কুলম্ব সমান ৬২৮×১০^১৬ ইলেক্ট্রন চার্জ।আমরা সচরাচর দু’ধরনের কারেন্ট এর ব্যবহার দেখতে পাই। সেগুলো হলো:
১) এসি কারেন্ট বা অল্টারনেটিং কারেন্ট: এসি কারেন্ট বা অল্টারনেটিং কারেন্ট হলো এমন কারেন্ট যার মান সময়েল সাথে পরিবর্তিত হতে থাকে।
২) ডিসি কারেন্ট বা ডাইরেক্ট কারেন্ট: ডিসি কারেন্ট বা ডাইরেক্ট কারেন্ট হলো এমন কারেন্ট যার মান সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় না বা স্থির থাকে।
তোমাদের জেনে রাখা দরকার এ দু ধরনের কারেন্ট ছাড়াও আরো এক ধরনের কারেন্ট আছে তা হলো এডি কারেন্ট বা লস কারেন্ট। তামার তার দিয়ে তৈরি কয়েল থেকেই মূলত এডি কারেন্ট উৎপন্ন হয়।
বিদ্যুৎ আবিস্কার করেছিলেন মাইকেল ফ্যারাডে নামে এক বিজ্ঞানী। পরবর্তীতে তার আবিস্কার থেকে তড়িৎ মটর ও এ সম্পর্কিত প্রযুক্তির উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। বর্তমান বিশ্বে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হচ্ছে পানি গ্যাস কয়লা বায়ু সৌরশক্তি এবং রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা। বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে রাখলে কোন কাজে আসবে না,মানুষ যদি সেটা ব্যবহার করতে না পারে। তাহলে আমরা এখন জেনে নিতে পারি কিভাবে বিদ্যুৎ সর্বরাহ করা হয়।
টমাস আলভা এডিসনের নাম শুনেছ তোমরা? তাকে নিয়ে মজার সব ঘটনা আছে আমরা আস্তে আস্তে সেসবও জানবো। এই টমাস আলভা এডিসন সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ সর্বরাহ ব্যবস্থা চালু করেন। টমাস ৯ জন গ্রাহকের কাছে ১১০ ভোল্ট বিদ্যুৎ সর্ববারহ করেন সেই বিদ্যুৎ চিল একমুখী প্রবাহ বিদ্যুৎ।এর পর ১৮৮৭ মালে নিকোলা টেসলা পরবর্তীতে বিদ্যুৎ সর্বরাহের জন্য স্বত্ত্ব বা প্যাটেন্ট গ্রহণ করেন। আচ্ছা তোমরা কি জানো প্যাটেন্ট আসলে কি? খাস বাংলায় বললে প্যাটেন্ট হলো দলিল। নিজের নামে স্বীকৃতি পাওয়ার নাম প্যাটেন্ট। প্যাটেন্ট করার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় ওই আবিস্কারটি তার এবং এটি অন্য কেউ দাবী করতে পারবে না। এর পর টেসলা দীর্ঘ দুরত্বে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন করেন। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন “ আমরা বিদ্যুৎকে বেধে রেখেছি লোহার শিকল দ্বারা,এই পৃথিবীর অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু বিদ্যুৎ সেই লোহার শিকলে আটকে আছে।“
লেখকঃ মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান
Comments are closed.