মবিন শিকদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
অবাক হচ্ছো?হবারই কথা। বয়স ৬ বছর,প্রস্তুতি নিচ্ছে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য। ছয় বছর বয়সী বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত আইনস্টাইনকে কে না চেনে? ঘটনার শুরু ২০১৩ সালের জুনে। সুবর্ন আইজ্যাক বয়স তখন এক বছর। সে তখন তার মায়ের সাথে বসে যোগ এর অঙ্ক শিখছিলো। সুবর্ণের বাবা রাশীদুল বারী ব্রনেকস কমিউনিটি কলেজের ম্যাথের শিক্ষক। তিনি পাশের রুমে বসে তার ছাত্রদের পরীক্ষার খাতা দেখচিলেন। হঠাৎ পাশের রুম থেকে সুবর্ণের মায়ের কৌতুলহ জড়ানো ডাক পড়লো তার। পাশের রুমে যেতেই সুবর্ণের মা বললো সুবর্ণ এমন কিছু বলে উঠেছে যা তাকে কখনোই শেখানো হয়নি।সে বলেছে 1+1 = 2 হলে অবশ্যই n+n=2n হবে। সেদিন প্রচন্ড অবাক হয়েছিলেন সুবর্ণের বাবা। এর পর থেকে দিনের কিছুটা সময় তিনি ছেলেকে ম্যাথ শেখাতে শুরু করলেন। তার কয়েক মাস পর সুবর্ণের বয়স যখন দুই বছর তখন তাকে অসুস্থ্য জনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হলো। হাসপাতালের বেডে শুয়েছিল সুবর্ণ। বেডের পাশেই একটা চেয়ারে বসেছিলো তার বাবা। তিনি সুবর্ণের হাত ধরে বললেন তুমি খুব শিঘ্রই ভালো হয়ে যাবে কারণ আমি তোমাকে এই ইউনিভার্সের যে কোন কিছু থেকে বেশি ভালোবাসি। তাৎক্ষণাৎ অসুস্থ্য সুবর্ণ বলে উঠলো ইউনিভার্স নাকি মাল্টিভার্স? বিস্মিত বাবা ছেলের উত্তরে বুঝতে পারলেন এই ছেলেটি তার শিক্ষা জীবনে অনেক বেশি উন্নতি করতে পারবে। কিন্তু তখন তার বাবা জানতেন না মাত্র চার বছর বয়সে এই ছোট্ট সুবর্ণ পিএইচডি পর্যায়ের গণিত পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়নের সমস্যা সমাধান করবে।
৯ নভেম্বর ২০১৬, সুবর্ণের বাবা দুঃখিত ছিলেন কেননা গতকালই তাদের একজন প্রাথী নির্বাচনে হেরে গেছেন। নেহাত দুঃখটা ভুলে থাকার জন্য তিনি তার দুই ছেলেকে নিয়ে লেহম্যান কলেজে গেলেন যেন সুবর্ণ কয়েকটা গণিতের সমস্যা সমাধান করতে পারে। মনের অবস্থা খারাপ থাকলেও ঘন্টা কয়েক পরে সবকিছু বদলে গেলো যখন তার বড় ছেলে রিফাত অ্যালবার্ট বারী তার রুমে ঢুকে বললো সুবর্ণের কাছে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি স্বীকৃতি চিঠি এসেছে। বাবা ভুলে গেলেন গতকাল কি হয়েছে। অসম্ভব রকম আনন্দের সাথে প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে কাটানো পুরো সময়টি ক্যমেরাবন্দী করে রাখলেন সুবর্নের বাবা।
বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন জন্মের পর থেকে চার বছর পযর্ন্ত কথাই বলেনি আর সুবর্ণ এই বয়েসেই মুগ্ধ করেছে সবাইকে। পেয়ে গেছে ক্ষুদে আইনস্টাইন খেতাব। দ্য সিটি কলেজ অব নিউইয়র্কের প্রেসিডেন্ট লিসা কইকো মনে করেন বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করবে এই ছেলে। তিনি একবার শিশু সুবর্ণর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।কাগজ গ্লাস বোর্ড সহ বিভিন্ন জায়গায় গাণিতিক সমস্যার সমাধান করেছে এই বিস্ময় বালক।আর সন্তানের এমন বিস্ময়কর ঘটনা দেখে আশাবাদী বাবা মা । মাত্র দু বছর বয়সেই ভয়েস অব আমেরিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছে সুবর্ণ।সাবরিনা চৌধুরী ডোনা তার সাক্ষাৎকার নেন আর সেটা ছিলো এ যাবৎকালে ভয়েস অব আমেরিকার সবচেয়ে কনিষ্ঠজনের সাক্ষাৎকার। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী অনলাইন টেলিভিশন টাইম টেলিভিশনে প্রচারিত হয় তার একটি সাক্ষাৎকার।
নিউইয়র্ক এর মেডগার এভারস কলেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জেরল্ড পোসম্যান ছোট্ট এই শিশুটির রসায়নের পর্যায় সারণীর ওপর দখল দেখে মুগ্ধ হন।নিজেও কিছু রাসায়নিক সংকেত জিজ্ঞেস করেন আর সুবর্ণ সেগুলোর দ্রুত উত্তর দেওয়া দেখে তিনি খুবই অবাক হন। সুবর্ণর একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। সেখান থেকে উত্তর পাওয়া যায় বিজ্ঞানের প্রতি তার আকাঙ্খা কি পরিমান বাড়ছে। সাড়ে তিন বছর বয়স থেকেই বাবার ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ শুরু করে। যার মদ্যে একটি হচ্ছে লেবুর সাহায্যে ব্যাটারি তৈরী। যার মাধ্যমে ইলেকট্রিক সার্কিট বানিয়ে পোটেনশিয়াল ডিফারেন্স এর মাধ্যমে বাতি জ্বালানো যায়। মাত্র তিনবছর বয়সে অর্থাৎ ২০১৫ সালে এটা আবিস্কার করে সে। শুধুমাত্র চারটি লেবু চারটি পেরেক চারটি মুদ্র ও পাচটি এলিগেট্র ক্লীপ ব্যবহার করে বানানো হয় সেই ব্যাটারী।
লিমনকলেজের ফিজিক্সের চেয়ারম্যান ড.ড্যানিয়েল কাবাট সুবর্ণর বানানো সেই ব্যাটারী দেখে ভীষণ মুগ্ধ হন। আর সুবর্ণ দেখছে মাত্র দশ বছর বয়সে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন। আর এ জন্যই উচ্চমাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যে স্যাট পরীক্ষা দিতে হয় সেই প্রস্তুতি নেয়ার অপেক্ষায় সে। বিস্ময়কর বালকের যাবতীয় পড়ালেখার আপডেট পাওয়া যাবে বারী সায়েন্স ল্যাবের পেজে।
Comments are closed.