লেখাঃ উজ্জ্বল দাশ,লন্ডন,যুক্তরাজ্য
–
ক্ষুদে লেখক রাশিকের মিস্ট্রি অব দ্য সুপার ন্যাচারালস বইটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।বিশ্বকে নানা অপশক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে মরিয়া ব্রিটিশ বাংলাদেশি কিশোর মীর রাশীক আহনাফ। বহু বছর আগেকার কথা, পৃথিবীটাকে নিয়ন্ত্রণ করত দুর্দান্ত প্রতাপশালী এক অশুভ শক্তিচক্র। প্রতিনিয়ত ধ্বংসের মুখোমুখি ধরণিকে নিজের বুদ্ধিমত্তার জোরে টিকিয়ে রাখার নিরন্তর চেষ্টায় শেষতক সফল কিশোর লেখক রাশীক। কল্পনাপ্রসূত রহস্যময় প্রথম গল্পেই পাঠকের মন কেড়েছে এই খুদে লিখিয়ে।
আট বছর বয়সে স্কুলের পত্রিকায় ছাপা হওয়া কবিতা দিয়ে রাশীকের শুরুটা হয়েছিল ঠিক; তবে মায়ের সঙ্গে স্কুলের লম্বা ছুটি কাটাতে গিয়ে অনেকটা খেয়ালি ছলেই কিশোর রাশীকের হাতে উঠে আসে অপ্রাকৃত পৃথিবীর এক রোমাঞ্চকর গল্প। ব্রিটিশ বাংলাদেশি কনিষ্ঠ লেখকের তকমা পাওয়া রাশীকের লেখা মিস্ট্রি অব দ্য সুপার ন্যাচারালস ডিসেম্বর (২০১৫) মাসের সেরা বই হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে, এমনটাই জানিয়েছে বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অলিম্পিয়া।
গল্পে ছেলের হাতেখড়ি প্রসঙ্গে মা আয়েশা আক্তার বললেন, রাশীকের বয়স তখন ১০; ক্যানসার রিসার্চ প্রজেক্টের কাজ নিয়ে আমি খুব ব্যস্ত। ওর স্কুল বন্ধ, ফরেস্ট একাডেমিতে ইংরেজি ক্লাসও নেই। ওকে বলি তুমিও কিছু একটা লেখার চেষ্টা কর? অমনি কী যেন লিখতে বসে গেল। কাজের চাপে খেয়াল করিনি, সপ্তাহ খানেক পর দেখি বেশ কয়েক পাতা লিখে ফেলেছে। পড়তে গিয়ে নিজের কাছেই খুব ভালো লেগে গেল। আমাদের পৃথিবী এক বিস্ময়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি, অশুভশক্তির কাছ থেকে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে টিকিয়ে দিল কিনা আমার ছেলে।
পাশে বসা রাশীক মায়ের কথা মনোযোগ দিয়েই শুনছিল। বলল, অনেক দিন থেকেই মাথায় গল্পটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমাকে লিখতে হবে ভাবিনি। মায়ের কথায় শুরু করে শেষতক পুরো গল্পে রূপ নেবে সেটি নিজেও ভাবিনি।
ছেলের গল্প লেখার হাত কেমন? সেটিই পরখ করতে ব্রিটেনের কয়েকটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে পাণ্ডুলিপি পাঠান রাশীকের মা। বললেন, রাশীকের গল্প পড়ে দুই-তিনটা প্রকাশনী ওর লেখার ধরন ও কাহিনির পট পরিবর্তন, গাঁথুনির প্রশংসা করে উত্তর জানায়। তবে অলিম্পিয়া প্রকাশনী শুরুতেই বই প্রকাশে আগ্রহী বলে জানায়। পাশাপাশি রাশীকের তৈরি ডিজাইন বইয়ের কভার হিসেবেও নিশ্চিত করে তারা।
রাশীকদের পূর্ব পুরুষের ভিটে ঢাকার অদূরে বিক্রমপুর। চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট মীর মো. জুলহাস হোসেন ও আয়েশা আক্তার দম্পতির দুই ছেলে রাশীক (১২) ও রিহান (৬)। ভিনদেশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাশীক অনর্গল শুদ্ধ বাংলায় কথা বলছে, এই শেষ নয় স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ ভাষায়ও পটু সে। ওর বাবা জানালেন, রাশীক এখন বাংলা লিখতে ও পড়তে শুরু করেছে।
২০১৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশ ঘুরে আসে রাশীকের পরিবার। দেশের স্মৃতি বলতে ঢাকা চিড়িয়াখানায় ময়ূরের পেখম তোলার দৃশ্য খুব মনে পড়ে তার। তবে বৃষ্টি বাংলা একাডেমি বইমেলায় বেড়ানোর আনন্দ কিছুটা ফিকে করে দিয়েছিল মাঠ জুড়ে কাদা। তবে বাংলা পুরোপুরি পড়তে পারলে বইমেলায় আবার ঘুরে আসার আনন্দ বেড়ে যাবে!
সায়েন্স ফিকশন নিয়ে প্রথম বইয়ে সাড়া ফেলা মিস্ট্রি অব দ্য সুপার ন্যাচারালস-এর লেখক রাশীকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাই। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল, আমার গল্পের আরও দুটি সিক্যুয়াল লিখব ভাবছি আর বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। বিজ্ঞান আর অঙ্কে আমি বরাবর ভালো টিচার বলেছেন।
ইংল্যান্ডের এসেক্স ইলফোর্ড কাউন্টি স্কুল পড়ুয়া রাশীক এখন সহপাঠীদের পাশাপাশি দেশজুড়ে কিশোরদের কাছে জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠছে। কিছুদিন আগে আইটিভির প্রাইম টাইম লাইভ নিউজে তার ইন্টারভিউ প্রচার হওয়ায় তার লেখনী নিয়ে আলোচনায় নতুন মাত্রা পায়। বেড়েছে তার বইয়ের কাটতিও
ফরেস্ট একাডেমি লার্নিং রিসোর্স সেন্টার ব্যবস্থাপক পাওলা সেপার বললেন, পুরো গল্প জুড়ে টান টান উত্তেজনা, অপ্রাকৃত রহস্যময় পরিস্থিতিতে ধরণিকে অশুভ শক্তি থেকে বাঁচানোর চেষ্টায় কঠোর ছিল গল্পকার রাশীক। ওর সাফল্যে আমরা গর্বিত, রাশীক এখন প্রেরণার নাম। পড়াশোনার পাশাপাশি লিখিয়ে হিসেবে সুনাম কুড়াবে আর আমরা অপেক্ষায় আছি ওর গল্পের দ্বিতীয় পর্ব শুনতে!
এদিকে কিশোরদের নিয়ে কাজ করা দাতব্য প্রতিষ্ঠান জ্যাক পাচির আউট স্ট্যান্ডিং অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড রাশীকের সাফল্যের অনন্য স্বীকৃতি।
আর ছেলের সাফল্যগাথা নিয়ে বাবা জুলহাস হোসেনের সরল স্বীকারোক্তি, অনেক গর্বিত বোধ করছি তবে রাশীকের প্রতি ওর মায়ের ভূমিকা বিশাল। ছেলে আমার বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড ক্রিকেট ম্যাচে পূর্ব পুরুষের দেশের পক্ষ নেয়; চিৎকার করে বলে বাংলাদেশ! বাবা হিসেবে এটিই বড় প্রাপ্তি।
ইবে কিংবা আমাজন-এর পাশাপাশি সুপার স্টোর ও ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে পাওয়া যাচ্ছে দ্য মিস্ট্রি অব সুপার ন্যাচারালস, প্রথম বই হিসেবে অলিম্পিয়া বলছে কাটতি বেশ ভালো! রাশীক চাইলে ওর গল্পের সিক্যুয়াল ছাপতে রাজি অলিম্পিয়া পাবলিশার্স। জয়তু; রাশীক ভিনদেশে বেড়ে ওঠা সাহসী প্রজন্ম।
সুত্রঃ প্রথম আলো
Comments are closed.