মানুষের জীবনে সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা সবই থাকে। সুখের পরে যেমন দুঃখ আসতে পারে তেমনি দুঃখের পর সুখও আসতে পারে। জীবনে ভালো কিছু করতে হলে প্রতিটি পদক্ষেপ গুরুত্বের সাথে ফেলতে হয়। সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ বলে যে প্রবাদটি রয়েছে তা আমাদের অনুসরণ করা উচিত। আমরা যদি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করি তবে সেই সময়ে আমরা বিপাকে পড়লে কোথাও যাওয়ার যায়গা থাকবে না। সমাধান মিলবে না। মহামারিকাল আমাদের যা কিছু শিখিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো আমাদের উপার্জন করা যেমন জরুরি, সঞ্চয় করাও তেমনি দরকারি। বিশ্বের সেরা ধনীদের একজন ওয়ারেন বাফেট বলেন, অন্যরা আগে খরচ করে, তারপর যেটা বেঁচে যায়, সেটা জমায়। আর তিনি আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমিয়ে রাখেন। তিনি বলেছেন আগে জমাও তারপর কিছু বেচে থাকলে তা খরচ করো। মানে জমাতে হবে তারপর যা বাকি থাকে, সেটা খরচ করেন। তাই আপনার সন্তানকে এখন থেকেই সঞ্চয়ী হওয়ার শিক্ষা দিন। কেননা, শিশুকালই শেখানোর সেরা সময়। এ সময় যা কিছু শেখাবেন, তা সারা জীবনের জন্য মাথায় গেঁথে যাবে। কীভাবে সেটা করবেন, জেনে নেওয়া যাক তার কয়েকটি উপায়।
আমরা জানি ছোটরা অনুকরণ প্রিয় হয়। তাদের সামনে বা তাদের সাথে আপনি যা করবেন তারা আপনাকে অনুসরণ করে তাই করতে চেষ্টা করবে। কিন্তু তাদেরকে কিছু এমনিতে বললে তারা তা নাও শুনতে পারে। ফলে আপনি এমন কিছু করবেন না যা আপনার সন্তানকে করতে বলবেন না। সুতরাং সন্তানকে সঞ্চয়ী বানাতে চাইলে আগে নিজে সঞ্চয়ী হোন। কেননা, শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। আপনি যদি বেহিসেবী হন আর সন্তানের সামনে যদি সঞ্চয় কেন জরুরি, কীভাবে করতে হবে, সে বুলি আওড়াতেই থাকেন, তাতে কোনো লাভ হবে না। তাই আপনি নিজে সঞ্চয়ী হোন। আপনার সন্তানকে সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলুন।
চাইলেই কিছু পাওয়া যায়, এমন ধারণা যেন আপনার সন্তানের না হয়। মাঝেমধ্যে আপনার সন্তানকে দিয়ে ঘরের কাজ করান। আর সেজন্য তাকে অর্থ দিন। একটা শিশু যখন পরিশ্রম করে টাকা পাবে, তখন সে সেই কষ্টে উপার্জিত অর্থ খরচ করার বিষয়ে ভাববে ও সচেতন হবে।
সন্তানকে কোনটা প্রয়োজন আর কোনটা বিলাসিতা, সেটা বুঝিয়ে বলুন। বলুন যে পায়ের স্যান্ডেল ছোট হয়ে গেছে, নতুন একজোড়া কিনতে হবে। সেটা প্রয়োজন। অন্যদিকে বাসায় আরও তিনটা খেলনা গাড়ি আছে। তাই যে খেলনাটা সে নেবেই বলে জেদ করছে, সেটা বিলাসিতা। ছোটবেলা থেকে সন্তানকে বিলাসিতার নেতিবাচক দিকগুলো বোঝান। বিলাসদ্রব্যে যেন অভ্যস্ত না হয়ে পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ঘরের খাবারে অভ্যস্ত করুন। তাতে অপচয়ের পরিমাণ কমবে। খরচের অভ্যাস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সঞ্চয় যে শক্তি, সেটা বুঝিয়ে বলুন।
আপনার সন্তানকে একটা মাটির ব্যাংক কিনে দিন। শুরুতে সেখানে টাকা জমানোর অভ্যাস করুক। তারপর তার একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে দিন। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অ্যাকাউন্টটি আপনার তত্ত্বাবধানে থাকবে। তার বয়স ১৮ বছর হলে সে বেশ কিছু টাকার ‘মালিক’ হয়ে যাবে।
আপনার সন্তানের সামনে তিনটা পাত্র রাখুন। যখনই সে কোনো জায়গা থেকে কোনো টাকা পাবে, সেটা সে তিন ভাগ করে খরচের জন্য, দানের জন্য, জমানোর জন্য এভাবে রেখে দেবে। তাহলে তার দান করা ও জমানো—দুটি ভালো অভ্যাসই গড়ে উঠবে।
সন্তানকে টাকা জমাতে অনুপ্রাণিত করুন। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমে গেলে তাকে উপহার দিন। যেমন রিকশাভাড়া থেকে প্রতিদিন ১০-২০ টাকা করে বাঁচিয়ে সে যখন ৫০০ টাকা জমিয়ে ফেলবে, তখন তাকে রেস্তোরাঁয় নিয়ে বা বাড়িতেই তার প্রিয় কিছু বানিয়ে খাওয়ান। অথবা প্রয়োজনীয় কিছু, যেমন রংপেনসিল কিনে দিন।
সন্তানকে আত্মনির্ভরশীল হতে অনুপ্রাণিত করুন। মনে করুন, সে অনেক দিন ধরে আপনাকে একটা ঘড়ি কিনে দিতে বলছে। আপনি তাকে সেটা টাকা জমিয়ে কিনতে বলুন। বলুন যে এভাবে সে নিজেই নিজের শখ পূরণ করতে পারবে আর গর্ব করে অন্যদের বলতেও পারবে!