নীলগঞ্জের মোড় থেকে এক কিলোমিটার দুরে একটা পরীর দিঘি ছিল।শুধু নাম যে পরীর দিঘি তা কিন্তু নয়। সত্যি সত্যিই সেখানে পরীরা থাকতো। হাসতো খেলতো গান গাইতো।ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে ছিল তাদের অনেক ভাল বন্ধুত্ব।সেই পরীরাও ছিল দেখতে খুবই ছোট ছোট।পরীর দিঘির পথটা ছিল পাকা।যখন বৃষ্টিতে সেই পথ ভিজে যেত তখন পরীরা নেমে আসতো পরীস্থান থেকে।কখনো কখনো ছোটদেরকে পরীস্থানে ঘুরতে নিয়ে যেত তারা।
কৃষ্ণচূড়া ফুল তখন ভেজা রাস্তায় বিছিয়ে যেত আর অনেক আনন্দ হত পরীদের।তারা ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে হাসতো খেলতো কত মজা করতো তার হিসেব নেই। তারা পরীস্থান থেকে নানা রকম ফলমুল নিয়ে আসতো।কিন্তু একদিন পৃথিবীর মানুষ নিষ্ঠুর হয়ে গেল। তারা পরীর দিঘির আসে পাশে যত গাছ ছিল তা কেটে ফেললো।যে ফুলের বাগান ছিল সেটাও ধ্বংস করে ফেললো।তারা সেখানে বড় বড় দালান বানাতে শুরু করলো। পরীর দিঘির রং তখন ফ্যাকাশে হয়ে গেল।ছোট্ট পরীদের মনটাও খারাপ হয়ে গেল।তারা মন খারাপ করে ফিরে গেল পরীস্থানে।সেই যে গেল আর ফিরে এলোনা।সম্ভবত তাদের মন এখনো ভাল হয়নি।আর আমরাও তাদেরকে আস্তে আস্তে ভুলে যেতে শুরু করলাম।
রোজ রাতে আগে আমরা মায়ের মুখ থেকে সেই সব পরীদের কথা শুনতাম আর কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যেতাম।এখন মায়েরা আর গল্প বলতে পারেনা।পরীরাই আসেনা তাহলে গল্প বলবে কি করে?
কিন্তু যাবার সময় পরীরা বলেছিল যদি ছোট্ট ছোট্ট ছেলে মেয়েরা ঠিক মত লেখাপড়া করে,বাবা মায়ের কথা মত চলে,বেশি বেশি কার্টুন না দেখে আর জায়গা নোংরা না করে তবে পৃথিবীটা আবার সুন্দর হয়ে উঠবে।আবার পরীরা নেমে আসবে এই পৃথিবীতে।
এখন আমরা সেই সব বন্ধুদের ফিরিয়ে আনার জন্য বাড়িতে ফুলের গাছ লাগাই,মিথ্যা কথা বলিনা,বাবা মাকে খুশি করি আর ঠিকমত ক্লাসের পড়া পড়ি।আমরা জানি একদিন না একদিন আকাশ আলো করে সেই পরীরা আবার ফিরে আসবে পরীর দিঘিতে। সেই রাতে আকাশে অনেক বড় একটা চাঁদ থাকবে আর আমরা সেই আলোয় দেখবো চাঁদের মা বুড়ি চরকায় সুতো কাটছে।