বোধিসত্ত্ব এবার ক্লাস থ্রিতে পড়ে।ভীষণ দুষ্টু বুদ্ধি তার।সালমানখানের বিরাট ভক্ত।ওর স্বাস্থ্য মোটা হওয়ায় ওর নামই হয়ে যায় ভুটু।সেই সাথে সালমানখানের সেই বিখ্যাত চরিত্র ভাইজান থেকে সেও হয়ে ওঠে ভাইজান।ফলে শুধু ক্লাসের বন্ধুরাই নয় বরং স্কুলের টিচারেরাও ওকে ভুটু ভাইজান বলে ডাকে।বোধিসত্ত্বর দুষ্টুমীর কোন সীমা পরিসীমা নেই।সে তার ক্লাসের মিসকে প্রোপোজ করে বসে।মিস কিন্তু ওকে বকেনি বরং সুন্দর করে বুঝিয়েছে।ঘটনাটা এখানেই থেমে থাকেনি।
নতুন বছরের শুরুতেই শহর থেকে এসে ওদের ক্লাসে ভর্তি হলো তনুরুচি নামের একটি মেয়ে।যেদিন সে ক্লাসে আসলো সেদিন ছিলো বোধিসত্বর জন্মদিন।মিস তনুরুচিকে ওর পাশেই বসতে দিলেন।হয়ে গেলো বন্ধুত্ব।কিন্তু সব ক্লাসেইতো কিছু ঈর্ষাকাতর মানুষ থাকে।বোধিসত্ত্বর ক্লাসেও ছিলো একজন।তার নাম অজাত শত্রু!সে কারো কোন গোপনীয় বিষয় দেখলেই তা মিসকে বলে দেয়।ঘটনাতে প্যাচ লাগাতে সে ওস্তাদ।দেখতে দেখতে বন্ধু দিবস চলে আসায় তনুরুচি তার সব বন্ধুকে হাতে বন্ধুত্বের সুতো বেধে দিচ্ছিল।কোথা থেকে যেন ভুটু ভাইজান এসে হাজির।
সে বললো আমাকে বেধে দিবি না?তনুরুচির সব থেকে ভালোবন্ধু ভুটু ভাইজান।তনুরুচি ওকে সাথে সাথে বন্ধুত্বের স্বারক সুতো বেধে দিলে বোধিসত্ত্ব খুশি হয়ে ওর মুখে একটা চুমু দিয়ে দেয়।এটা আবার দেখে ফেলে অজাতশত্রু।আর যায় কোথায়? সে সোজা গিয়ে মিসকে বলে মিস ভুটু ভাইজান তনুরুচিকে কিস করেছে,হামি দিয়েছে।মিস জানতে চায় তাতে কি হয়েছে? তখন অজাতশত্রু বলেন আরে এই হামি সেই হামি না এটা হলো গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড হামি! দারুন জমে ওঠে ঘটনা।
ক্লাসে পড়ানোর সময় তনুরুচি হঠাৎ মিসকে বলে ওঠে মিস আমি প্রেগনেন্ট!! ওর কথা শুনে মিস তো থ! বলে কি এই সাত বছরের মেয়েটা!তিনি জানতে চান তুমি প্রেগনেন্ট?কিভাবে বুঝলে?তনুরুচি তখন বললো আম্মু বলেছে? মিস আরো আশ্চর্য হলেন।বিষয়টা জানতে চাইলেন। তখন তনুরুচি বললো বোধিসত্ত্ব আমাকে হামি দিয়েছে তাই আমি প্রেগন্যান্ট হয়েছি!মিস হাসবে না কাদবে বুঝতে পারে না।তখন তিনি জানতে চান তুমিকি জানো প্রেগন্যান্ট কি?তখন তনুরুচি বললো হ্যা।সেদিন আম্মু দিদা খুশিতে নাচছিলো।বলছিলো ফুপি প্রেগন্যান্ট।ফুপির বাচ্চা হবে।আমি জানতে চাইলাম আম্মু প্রেগন্যান্ট কিভাবে হয়? তখন আম্মু বলেছে ফুপা আদর করে ফুপিকে হামি দিয়েছে তাই প্রেগন্যান্ট হয়েছে।যেহেতু বোধিসত্ত্ব আমাকে হামি দিয়েছে তাই আমিও প্রেগন্যান্ট।টিচার হতবাক হয়ে যায়।
এভাবেই গল্প এগোতে থাকে।অসাধারণ সব মজার কান্ডকারখানার মধ্য দিয়ে দারুন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগে যায়।বোধিসত্ত্বর সেকশান থেকে তনুরুচিকে অন্য সেকশানে নিয়ে যাওয়া হয়।রাতে খেতে বসে ভুটুভাইজান বাবাকে প্রশ্ন করে আচ্চা বাবা তনুরুচিকে আমার সেকশান থেকে নিয়ে যাওয়া হলো কেন? আমি হামি দিয়েছি সে জন্য?বাবা বললো হ্যা।তখন বোধিসত্ব বললো তুমিওতো রোজ আম্মুকে হামি দাও কেউতো কখনো আম্মুকে অন্য ঘরে থাকতে বলে না।বাবা তখন বলে আমিতো তোমার আম্মুকে বিয়ে করেছি তাই।এটা শুনে বোধিসত্ব কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে আচ্ছা বাবা আমি যদি তনুরুচিকে বিয়ে করি তাহলেতো আমাদেরকে এক সেকশান থেকে আলাদা করতে পারবে না।ছেলের কথা শুনে আকাশ ভেঙ্গে পড়ার দশা।কিন্তু বোধিসত্ত্বর কথাতে কোন গড়বড় নেই।সে সত্যি সত্যিই মায়ের সিদুর চুরি করে নিয়ে গিয়ে স্কুলেই তনুরুচির কপালে সিদুর দিয়ে দেয় আর বলে আমি তোকে বিয়ে করলাম!!
ঘটনার ঘনঘটা।স্কুলের বাচ্চাদের স্কুল বাসে বাসায় দিয়ে আসে আবার নিয়ে আসে যে মানুষটি সবাই তাকে চাচা বলে ডাকে।চাচা অসাধারণ।বাচ্চাদের ভালোবাসেন এবং বাচ্চারাও তাকে খুবই ভালোবাসে।কিন্তু দিন একরকম যায় না।সেই চাচার বিরুদ্ধে শিশু যৌনহয়রানির অভিযোগ ওঠে।হাতেনাতে ধরা হয়।তাকে মারপিট করে থানায় দেওয়া হয়।কিন্তু প্রমান হয় ঘটনাটা সত্যি নয়।বাচ্চাটা ভয় পেয়েছিল তিনি শুধু তাকে শান্তনা দিয়ে জানতে চেয়েছিলেন কি হয়েছে।নির্দোশ প্রমানিত হওয়ার পরও তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে ইস্তফা দেন!তার বিদায়ের দিন বাচ্চারা আবেগজড়িত কন্ঠে অসাধারণ একটা গান করে যা প্রত্যেকের হৃদয় ছুয়ে যাবে।
আর এই গল্পের শেষটাও অসাধারণ হয়েছে।শেষটুকু আর নাইবা বলি।সব বলে দিলে সিনেমা দেখার মজা কমে যাবে।বলছিলাম অসাধারণ এক শিশুতোষ বাংলা সিনেমার কথা।সিনেমার নাম হামি।আচ্ছা হামি মানে কি?সাধারণ ভাবে বাচ্চারা অন্য বাচ্চাকে চুমু খেলে সেটাকে হামি বলে।একটা চুমুকে কেন্দ্র করে যে এতো অসাধারণ একটি সিনেমা তৈরি করা যেতে পারে তা হামি সিনেমাটি না দেখলে কারো বিশ্বাসই হবে না।
হামি শুধু মাত্র একটি শিশুতোষ সিনেমাই নয় এটি এমন একটি সিনেমা যা আমাদের বিবেককে জাগ্রত করে।আমাদের শিক্ষা দেয় বাচ্চাদের কোন কোন বিষয়ে কিভাবে শিক্ষা দিতে হয়।হামি সিনেমার মাধ্যমেই আমরা তুলে ধরতে পারি আমাদের স্কুল গুলোর অবস্থা।পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে যে একটি ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব তা আমরা বুঝতে পারি।হামি সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছে শিশুদের কোমলতা এবং শিক্ষক অভিভাবকদের অহেতুক সন্দেহ প্রবনতা।রেশারেশি দ্বন্দ্ব এগুলো যে বড়দের বিষয় আর শিশুরা যে নির্মল আনন্দের জন্য অনেক কিছু করে তা হামি সিনেমারমাধ্যমে পরিস্কার হয়।
ভুটু ভাইজান তথা বোধিসত্ত্ব চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছে ব্রত বন্দ্যোপাধ্যয় নামের ছোট্ট ছেলেটি।দেখলে মনে হয় ওর জন্মই হয়েছে অভিনয় করার জন্য।অন্যদিকে তনুরুচি চরিত্রে অভিনয় করেছে মিষ্টি মেয়ে তিয়াসা পাল।হামি সিনেমাতে তাই তনুরুচি তথা তিয়াসা পালের ডাকনাম থাকে চিনি।দেখতে মিষ্টি বলেই চিনি।
আভিনয়ে
- ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়[২] -ভুটু ভাইজান / বোধিসত্ত্ব
- তিয়াষা পাল
- তনুশ্রি শঙ্কর – অধ্যক্ষ
- শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় – লালটু বিশ্বাস
- অপরাজিতা আঢ্য – সহ অধ্যক্ষ
- কণিনিকা ব্যানার্জী– শ্যামলী রক্ষিত
- খরাজ মুখোপাধ্যায় – স্থানীয় কাউন্সিলর
- গার্গী রায়চৌধুরী – মিতালী বিশ্বাস
- অভিরাজ করণ – শত্রু
- নীল মুখোপাধ্যায় – সৃঞ্জয় সেন
- চুর্নী গাঙ্গুলি – রীনা সেন
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যয় এবং নন্দিতা রায় পরিচালিত সিনেমাটি নির্মানে খরচ হয়েছিল ৮৫ লাখ টাকা।বিনিময়ে আয় হয়েছে ৩.৭ কোটি টাকা।২০১৮ সালের ১১ মে মুক্তিপ্রাপ্ত হামি সিনেমাটি ছোটদের স্কুলের বন্ধুত্বের অসাধারণ গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমা সারা বাংলা মুলুকে নন্দিত হয়েছে।এই সিনেমাতে আমরা তিন শিশু শিল্পীকে পেয়েছি যারা এই বয়সেই অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছে।বোধিসত্ত্ব চরিত্রে ব্রত বন্দ্যোপাধ্যয়,তনুরুচি চরিত্রে তিয়াষা পাল আর অজাত শুত্রু চরিত্র এই তিন অসাধারণ চরিত্র বাংলা চলচ্চিত্রে আবির্ভাব ঘটেছে।এই সিনেমাটি প্রতিটি পিতা মাতা এবং শিক্ষকদের দেখা উচিত।বিশেষ করে বাচ্চাদের স্কুলে পড়ান এমন শিক্ষকরা এই সিনেমাটি দেখলে অনেক কিছু বুঝতে পারবেন যা স্কুলে বাচ্চাদের হেল্প করতে সহায়ক হবে।
লেখাঃ জাজাফী
আরও অন্যান্য শিশুতোষ সিনেমার রিভিউ পড়ুনঃ
আপনিও লিখতে পারেন। পাঠিয়ে দিতে পারেন [email protected] এই ইমেইলে।
Comments are closed.