আমি সব সময় বলি “আমার বোন পৃথিবীর সেরা বোন” কথাটা কেন বলি সেটা এখন বলতে চাইছিনা। আজ বরং চলুন অন্য এক বোনের গল্প শুনি।আমার দেখা পৃথিবী সেরা বোন হতে পারে সে।বয়স কতইবা হবে এই ধরুন বার কিংবা তের বছর।এই ছোট্ট মেয়েটিকে আমি অনায়াসে পৃথিবী সেরা বোন বলে দিচ্ছি দেখে জানি সবাই ভ্রু কুচকাবে।কপালের ভাজ আরো দৃঢ় হবে।কিন্তু গল্পটা শোনার পর আশা করি অনুভূতিটা বদলে যাবে।ধানাকঃ পৃথিবী সেরা এক ভাই বোনের গল্প।
পৃথিবী সেরা এই বোনের নাম পরী।যে তার এক মাত্র ভাইয়ের কথা ভেবে যথেষ্ট মেধাবী হওয়ার পরও প্রতি পরীক্ষায় ইচ্ছে করে ফেল করে।ফেল করার পর পরিবার থেকে এবং স্কুল থেকে অপমানিত হয়,বকা খায়।কিন্তু পরী ওসব গায়ে মাখে না। সে ফেলকরেছে ইচ্ছে করে এবং সে সেরাদের সেরা হলে যতটা না খুশি হতো তার থেকে হাজার গুন খুশি হয়েছে ফেল করে।একই সাথে তার এক মাত্র ভাইটাও ভীষণ খুশি।বোনের হাত ধরে সে বলেছে তুই পৃথিবী সেরা বোন।আমার জন্য তুই ইচ্ছে করে ফেল করেছিস।বোনটা কেন ইচ্ছে করে ফেল করেছে? কারণ তার একমাত্র ভাই অন্ধ।ভাইয়ের বয়স ৮ বছরের কিছু বেশি।আর কদিন পরই ভাইটা নয় বছরে পড়বে।সেও একই স্কুলে পড়ে।অন্ধ বলে ক্লাসের কেউ তাকে সহযোগিতা করেনা।বোন ভাবলো সে নিজেই ইচ্ছে করে ফেল করবে যেন ভাইয়ের সাথে একই ক্লাসে পড়তে পারে আর ভাইকে আগলে রাখতে পারে।বুদ্ধিটা পিচ্চি ভাইয়েরও পছন্দ হলো।এই অন্ধ ভাইটার নাম ছোটু।
পরী আর ছোটু দুই ভাই বোন থাকে তাদের চাচার বাড়িতে।চাচা সারাদিন রাত মাতাল থাকে তবে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেনা।চাচি নিজে খেটেপিটে সংসার চালায়।মাঝে মাঝে পরী আর ছোটুকে বকাঝকাও করে।পরী আর ছোটু দুজনেই পরিবারে নানা কাজে সহযোগিতা করে।কোন এক দুর্ঘটনায় ওদের বাবা মা চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়।সেই থেকে পৃথিবীতে ছোটুর বাবা মা বোন সব ভূমিকাতেই পরী।
ছোটু জন্ম থেকে অন্ধ ছিলনা।এক আঘাতের পর সে ধীরে ধীরে চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করে।ওর বয়স তখন চার বছর।ওর শুধু মনে আছে শেষ বার ও সালমান খানের দাবাং ছবিটি দেখেছিল।তার পর আর কিছুই দেখেনি সে।ছোটু সালমান খানের ভীষণ ভক্ত।তার প্রতিটি গান,প্রতিটি ডায়লগই প্রায় তার মুখস্ত।ছোটু আর পরী থাকে ইন্ডিয়ার রাজস্থানের জায়সেলমিরে।জায়সেলমির মরুভূমির জন্য বিখ্যাত।সারা পৃথিবী থেকে অগণিত পযর্টক আসে এখানে।
পরী তার এক মাত্র ছোট ভাইয়ের ঠিক উল্টো।তার পছন্দ শাহরুখ খান।স্কুলে যাওয়া আসার পথে দুই ভাই বোন তাই শাহরুখ সালমান নিয়ে গল্প করতে করতে যায়।কেউ জেতেনা কেউ হারেনা। তারা মিটমাট করে বলে ওরা দুজনতো করণ অর্জুন।
পরীর একমাত্র ইচ্ছে তার একমাত্র ছোটভাইয়ের চোখের আলো ফিরিয়ে আনা।সে ছোটুকে কথা দিয়েছে আগামী জন্মদিন আসার আগেই তার চোখে আলো ফিরিয়ে দেবে।জন্মদিন আসতে আর বেশিদিন বাকি নেই।এবার ছোটুর বয়স নয় বছর হবে।কিন্তু পরী জানেনা কিভাবে ছোটুর চোখের আলো ফিরিয়ে আনবে।তাদেরতো চিকিৎসা করার মত কোন ক্ষমতা নেই।পরী যখন তার ছোট্ট ভাইটিকে বলেছে তোর আগামী জন্মদিনেই তোকে আমি রংধনু দেখাবো তখন ছোটু হেসে দিয়ে বলেছে তুইকি আমাকে রাত্রিবেলার রংধনু দেখাবি?ছোটুতো জানে সে অন্ধ এবং সে চোখেই দেখবেনা তাহলে রংধনু দেখা আর রাত দেখাতো একই কথা।
এক সকালে ছোটুদের বাড়িতে এক স্কুল শিক্ষিকা আসলেন।ছোটুকে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া শেখাতে চান যেন ওর জন্য সহজ হয়।কিন্তু ছোটু কোন ভাবেই রাজি নয়।সে বলে সেতো অন্ধ না।পরীও বলে আমার ভাই অন্ধ না।ও একদিন না একদিন আবার দেখতে পাবে।কিন্তু কেউ জানেনা কিভাবে সেটা সম্ভব হবে।
একদিন পরী,ছোটু আর তার মাতাল চাচা গেল সিনেমা দেখতে।পরী সিনেমা দেখে দেখে পাশে বসে থাকা ছোটুকে কাহিনী শোনাতে থাকে আর ছোটু আনন্দ পায়।সিনেমা দেখা শেষ করে বের হওয়ার পথে একটা পোষ্টারে চোখ আটকে যায় পরীর।সেই পোষ্টারে তার প্রিয় নায়ক শাহরুখ খানের ছবি।পাশে বড় বড় করে লেখা শাহরুখ খান অন্ধদের চোখের আলো ফিরিয়ে আনার জন্য সহযোগিতা করছে।পরী সেই পোষ্টারটা ছিড়ে বাড়িতে নিয়ে আসে।তার পর সুন্দর করে ভাইয়ের চোখের আলো ফিরিয়ে আনতে শাহরুখ খানকে চিঠি লেখে।
ডাক টিকেটের পয়সা নেই।পোষ্ট মাস্টারকে অনুরোধ করে টিকেট লাগিয়ে চিঠি পাঠাতে,পরে একদিন টাকা দিয়ে দেবে।পোষ্ট মাস্টার চিঠিটা রেখে দেয়।পরে সে ডাক টিকিট লাগিয়ে চিঠিটা পাঠায়।কিন্তু পরী পরের দিনও চিঠি নিয়ে আসে তার পরের দিনও আসে। এভাবে অনেক গুলো চিঠি দেয়।একদিন পোষ্টমাস্টার পরীর কাকাকে ডেকে চিঠি গুলো ধরিয়ে দেয়।সে সেই একটি চিঠিতে শুধু ডাক টিকেট লাগিয়ে পাঠিয়েছিল বাকি গুলো আর পাঠায়নি। পরী সেটা জানতেও পারেনি।
কি একটা কারণে পরী রাতের অন্ধকারে কাকার ট্রাংক খুলে কিছু টাকা নিতে চেষ্টা করে।যখন টাকা নেওয়া শেষ হয়েছে তখন ট্রাংকের এক পাশে তার চোখ আটকে যায়।সে দেখে তার লেখা চিঠিগুলো ওখানে যত্ন করে রাখা আছে।পরীর বুকটা ফেটে যেতে চায়।কিন্তু সে ভাইয়ের জন্য মনে সাহস রাখে।চিঠি গুলো নিয়ে ট্রাংকে তালা লাগিয়ে ছোটুকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে।তার পর সেই রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়।
কোথায় যাচ্ছে পরী? তাদের বাড়ি থেকে প্রায় তিনশো কিলোমিটার দূরে জায়সেলমিরের এক শুন্য মরূভূমিতে শ্যুটিং করতে আসছে শাহরুখ খান।সে ভাইকে নিয়ে শাহরুখ খানের সাথে দেখা করে ওর চোখের জন্য সাহায্য চাইবে।ছোট্ট পরী তার চোখের আলো হারিয়ে ফেলা ভাইয়ের হাত ধরে হাটতে থাকে।রাস্তায় কোন গাড়ি নেই।কোন দিক দিয়ে যেতে হবে তাও তাদের জানা নেই।হাটছে তো হাটছে।একসময় ছোটু বলে খুব ক্ষুধা লেগেছে কিছু খেতে দে।পরী বলে আরো একটু এগিয়ে তার পর খাস।কিন্তু সে নাছোড় বান্দা।একটা গাছের নিচেয় বসে একটা শুকনো রুটি খায় দুই ভাই বোন।পানি খাবে বলে যখন ব্যাগ খোজে দেখতে পায় কোন পানি নেই।পরী বলে সামনে কোথাও না কোথাও পানি পাবো তখন খেয়ে নেব।ছোটু বলে এবার দুজনই মরবো পানির পিপাসায়।
পৃথিবীর সেরা সেই বোনটি তার একমাত্র ভাইয়ের চোখে আলো ফেরাবে বলে ভাইয়ের হাত ধরে বেরিয়ে পড়েছে অজানায়।হাটছেতো হাটছেই।চারদিকে কোন জনমানুষের চিহ্ন নেই।কতদূর এসেছে কিংবা এটা কোন জায়গা তা তাদের জানা নেই।বাড়ি আর স্কুল ছাড়া তারা কোন দিন কোথাও যায়নি। হঠাৎ দেখতে পেলো রাস্তার ধারে একটা ট্রাক দাড়িয়ে আছে আর তার নিচেয় এক লোক শুয়ে আছে। পরী কাছে গিয়ে বললো কাকা পিপাসায় বুক ফেটে যাচ্ছে একটু পানি হবে?লোকটা এই বিরান মরুভূমিতে দুটো ছোট্ট বাচ্চাকে দেখে অবাক হলো।জানতে চাইলো তোমাদের বাবা মা কোথায়?পরী হয়তো কিছু বলতো না কিন্তু সাল্লু ভাইয়ের ভক্ত ছোটু গড় গড় করে বলে দিল তারা সেই অনেক আগে উধার মে চাল গায়া। লোকটার খুব মায়া হলো। সে পানি দিল এবং দুই ভাই বোন তৃপ্তি সহকারে পানি পান করলো।লোকটা জানতে চাইলো কোথায় যাবে?কেন যাবে। পরী লুকাতে চেয়েছিল কিন্তু সাল্লু ভাইয়ের সাগরেদ আবার বলে দিল।পরী অভিমান করে বললো এটা বলার কি ছিল? ছোটু তখন বোনের হাত ধরে বললো তুই আমাকে শাহরুখ খানের কাছে নিয়ে যাবি বলেছিস আর আমি সাথে সাথে রাজি হয়েছি কোন প্রশ্ন করিনি।এখন তুই কেন লুকাবি বল।
সেই ট্রাক ড্রাইভার ওদের দুই ভাই বোনকে ট্রাকে উঠিয়ে নিয়ে রওনা হলো।বললো জরুরী কাজ না থাকলে আমিই তোমাদেরকে ওখানে পৌছে দিতাম।শাহরুখ খানকে দেখার আমারও খুব ইচ্ছা।অনেক দূর যাওয়ার পর একটা দুই রাস্তার মোড়ে ট্রাক থেকে দুই ভাই বোনকে নামিয়ে দেওয়া হলো।সাথে কিছু রাজস্থানী নাস্তা আর এক বোতল পানি দেওয়া হলো।ট্রাক চলে যাওয়ার পর চারদিক আবার শুন্য।মরুভূমিতে কেউ নেই কোন বসতি নেই। আবার ওরা হাটছে। অনেক দূর আসার পর দেখলো একটা পিকআপ যাচ্ছে সেটার উপর অনেক মানুষ।গান চলছে সালমান খানের।তালে তালে নাচছে আর গাইছে এক মধ্য বয়স্ক লোক।সে যখন গানের একটা কলি গেয়েছে ছোটু তখন নিচ থেকে অন্য কলি গেয়েছে।লোকটার কানে সেটা পৌছেছে সাথে সাথে সে আবার তাল মিলিয়েছে এবং একই সাথে ছোটুও তাল মিলিয়েছে।
পিকআপের উপর নাচতে থাকা লোকটি চমকে গেছে পিচ্চির গান শুনে।সে পিকআপ পিছিয়ে নিয়ে ওদের সাথে কথা বলেছে।সাথে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।পরী বলেছে এসব লোকখুব একটা ভাল হয়না। ওদের সাথে না যাওয়াই ভাল।ছোটু আবার তাকে সেই আগের যুক্তি দিয়েছে।শেষে পরী আর ছোটু সেই লোকের সাথে উঠে বসেছে।তারা যখন ওই লোকটার বাড়িতে আসলো দেখতে পেলো তার একটা ছোট্ট ছেলে আছে ঠিক ছোটুর বয়সী।সেদিন রাতে ওরা ওখানেই থাকলো।ছোটুর সাথে ছেলেটির অনেক ভাল বন্ধুত্ব হলো।সে রাতে শুয়ে শুয়ে বললো তোকে দেখে মনেই হয়না তুই চোখে দেখতে পাস না।কিন্তু তোর বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেলে তোকে কে দেখবে বল?ছোটু তখন বললো আমি বোনের স্বামীকে অনুরোধ করবো তাদের সাথে থাকার জন্য।শমসের নামের সেই ছোট্ট ছেলেটি তখন ছোটুকে বললো আচ্ছা আমি যদি তোর জিজা হতাম তাহলে তোকে কোন চিন্তা করতে হতো না।আমি আর তোর বোন মিলে তোকে দেখে রাখতাম। অদ্ভুত সেই মুহুর্তটি। যখন ছোট্ট একটি ছেলে তারই মত বয়সী ছোটুর জন্য মায়া দেখিয়ে বয়সে বড় দিদির সমান একজনকে ভবিষ্যতে বিয়ে করার কথা চিন্তা করে।
পরী আর ছোটুর যাত্রা পথে বিপদের সীমা নেই।শমসেরের বাবা ওদের হাতে কিছু টাকা দিয়ে ওদেরকে একটু এগিয়ে দিয়ে কিভাবে যেতে হবে সব বলে দেয়।ওরা ওখান থেকে একটা পিকআপে চড়ে বসে।কিন্তু একটু যেতে না যেতেই পিকআপ নষ্ট হয়ে যায়।ওরা একটা যায়গাতে দাড়িয়ে ছিল।একটু ঘুরতেই পরী দেখতে পেলো বালুর উপর উপুড় হয়ে কেউ একজন পড়ে আছে।ছোটুতো দেখতে পায়না তাই ছোটুকে বললো তুই একটু দাড়া আমি আসতেছি।সেই পড়ে থাকা লোকটার কাছে গিয়ে ডাক দিলে কোন সাড়া পেলো না।পা ধরে নাড়া দিতেই সে চমকে উঠলো।
এক আমেরিকান বালুর মধ্যে পড়ে আছে।পিপাসায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে। সে পানি পানি বলে চিৎকার করেছে।ছোটু তার বোন পরীকে বললো পানি দিতে।পরী ভয় পেলো।না জানি লোকটা তার ভাইয়ের কোন ক্ষতি করে।তখন ছোটু সৃষ্টিকর্তার অনুকম্পার কথা বললো।পানি পান করার পর আমেরিকান অনেক খুশি হলো। ধন্যবাদ দিল।ওরা যখন চলে যাবে তখন ছোটু বললো লোকটার কাছে চকলেট চাইতে। লোকটা সেটা শুনতে পেয়ে পরীকে কাছে ডাকলো এবং ক্যান্ডিবার ধরিয়ে দিল।দুজনেই সেটা খাচ্ছিল বেশ।হঠাৎ ছোটু গলা ধরে বালিতে পড়ে গেল।যেন কেউ ওকে ক্যান্ডিবারের সাথে পটাশিয়াম সায়ানাইড মিশিয়ে খাইয়ে দিয়েছে আর সাথে সাথে মরে গেছে। পরীর যেন দুঃখের আর সীমা রইলো না।আমেরিকান লোকটাও হতভম্ব হয়ে গেল।পরী যখন হাহুতাশ করছে তখন ছোটু উঠে বসলো।পরীর তখন খুবই খুশি লাগলো।নিখুত অভিনয় করেছে ছোটু।ওদের দুজনকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে।এর সাথে সাথে আমেরিকানের সাথে ওদের ভাল বন্ধুত্ব হলো।একসাথে হাটতে শুরু করলো।
এই আমেরিকান বিশ্বটাকে পায়ে হেটে ঘুরে দেখতে বেরিয়ে এই বিরান মরুভূমিতে পানি শুন্য হয়ে মরতে বসেছিল।আমেরিকানকে যখন বিদায় জানালো ছোট্ট পরী আর ছোটু তখন তারা পাচারকারীদের কবলে পড়েছে।তবে ভাগ্য ভাল পথে এক দস্যুরাণী ওদেরকে উদ্ধার করলো।দস্যু হলেও তিনি খুবই ভাল।রানীদের সর্দারনীর কাছে নিয়ে যাওয়া হলো।তিনি অনেক আধ্যাতিক বিষয় জানেন এবং তিনিও অন্ধ।তিনি জানালেন হাতে সময় মাত্র দুদিন।এর পরই শাহরুখ খান চলে যাবেন।
এর মাঝে আরো অনেক ঘটনা ঘটলো।
একমাত্র ছোট ভাইয়ের চোখের আলো ফিরিয়ে আনতে তিনশো কিলোমিটার দুরে জায়সেলমীর যখন ওরা পৌছালো তখন জানতে পারলো শাহরুখ চলে গেছে।ওখানে এক দালাল নানা কৌশলে মানুষ থেকে টাকা কামিয়ে নিচ্ছিল।সে ওদের বললো এখান থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে শাহরুখ শ্যুটিং করবেন।কাউকে বলোনা চুপি চুপি এই সোজা রাস্তা দিয়ে চলতে থাকো।লোকটা ছিল খুবই খারাপ।মরুভূমির এমন একটা পথ ওদের দেখিয়ে দিল যে ওরা চলতে চলতে থেমে গেল।ছোটু যেন হারিয়ে না যায় তাই নিজের ওড়না দিয়ে ওকে বেধে নিল আর পরী হাটতে লাগলো সামনে।একটু যেতে না যেতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে গেল পরী।সে আর জাগলো না।আশে পাশে কোথাও কেউ নেই।বোনের জন্য চোখের আলোহীন সাড়ে আট বছরের ছোটু তখন দিশাহারা।চিৎকার করতে করতে সেই ঢলে পড়লো।
পরী কিংবা ছোটু দুজনেই আবিস্কার করলো তারা একটা হাসপাতালের বেডে।পরীকে যখন মরুভূমি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল তখন পরী আবছা দেখেছিল যে মুখটি তিনি স্বয়ং শাহরুখ খান। পরী সেটা ছোটুকে বলেছে কিন্তু ছোটু বিশ্বাস করেনি।এর মাঝে সে করিডোর দিয়ে হাটতে গিয়ে দেখতে পেলো সেই মানুষটি বেরিয়ে যাচ্ছে।দ্রুত তাকে ধরতে গিয়েও পারলোনা।বাইরে দেখলো গাড়িতে করে চলে যাচ্ছে লোকটি।ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করতেই সে শুধু মুচকি হাসলো।পরী তার একমাত্র ভাইকে দেওয়া কথা কি তবে রাখতে পারবে না? জন্মদিন আগামী কাল।অথচ ছোটুর চোখের আলো ফিরিয়ে আনা হয়নি।
বিষন্ন মনে পরী যখন করিডোর দিয়ে হাটছে তখন দেখতে পেলো চেয়ারের উপর একটা ছেড়া খাম।খামের উপর একটা ডাকটিকেট লাগানো এবং শাহরুখ খানের ঠিকানা লেখা।হাতের লেখাটা তার নিজের।তার বুঝতে বাকি থাকলোনা যে শাহরুখ খানের কাছে তার লেখা অন্তত একটা চিঠি পৌছেছিল এবং স্বয়ং শাহরুখ খান এই হাসপাতালে এসেছিলেন।বোনের ভালবাসার কাছে পৃথিবী থেমে গেল।ছোটুর চোখের বাধন খোলা হবে। ডাক্তার জানতে চাইলেন তুমি প্রথমে কাকে দেখতে চাও? সে হাসি দিয়ে বললো আমি বড় ভাইকে দেখতে চাই।বড় ভাই মানে সালমান খান।পরীর মুখটা কিছুটাওকি মলিন হলো? চোখের বাধন খুলে দেওয়া হলে সবার আগে সে দেখলো তার পৃথিবীর সেরা মানুষটিকে।যে তার বাবা মা ভাই বোন সব কিছু।সে তার একমাত্র বোন পরী।যে বোনটি পৃথিবীর সেরা বোন।যে কোন ভাবেই হার মানেনা।
ছোটু দেখলো তার পৃথিবীসেরা বোন হাতে একটা কেক আর একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে সামনে বসে আছে,মুখে অনাবিল হাসি।ছোটু দেখলো সেই মোমবাতির আলোর সাথে সুর্যের আলো মিলে সত্যিকার একটা রংধনু তৈরি হয়েছে। সে বললো পরী সত্যিই আমি রংধনু দেখছি।
আমার দেখা সেরা সিনেমা এটি।আমার দৃষ্টিতে সেরা বোনও পরী।এমন বোন যদি কারো থাকে তবে তার জীবনে অপুর্নতা বলে কিছু থাকেনা।আর ছোটু? ছোটুও অসাধারণ।আপনি পথের পাচালী,অপু দুর্গা নিয়ে অনেক কথা বলবেন জানি।তবে আমার নিজের মতে অপু দুর্গার চেয়ে অনেক বেশি ভাল লেগেছে পরী আর ছোটুকে।সিনেমাটিতে অনেক ম্যাসেজ আছে। সময় করে অন্তত এই মুভিটা দেখুন।সম্ভব হলে পরিবারের ছোটদের নিয়ে দেখুন।ভাই বোনের ভালবাসা কাকেবলে তা দেখে ছোটরা শিখুক।
মুভি রিভিউ
সিনেমাঃ ধানাক (ধানাক মানে রংধনু)
পরিচালকঃ নাগেশ কুকুনোর
ছোটু ও পরী চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছে
হেতাল গাদ্দা(পরী) ও ক্রিশ চাবরিয়া(ছোটু)
ভাষাঃ হিন্দি
১০৬ মিনিট।
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
বার্লিন ফিল্মফেস্টিভ্যাল।
রিভিউঃ জাজাফী
২২ জানুয়ারি ২০১৭
সিনেমাটি দেখুন এখানে
Comments are closed.