আধুনিক যুগে যখন সবকিছু স্মার্ট হচ্ছে, তখন মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেটের পৃথিবীতে। কিন্তু তাও জ্ঞান পিপাসুদের জানার একমাত্র উপায় বইপড়া। এই জ্ঞানের আধার বইয়ের সান্নিধ্য দেওয়ার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে বইঘর “বাতিঘর”। দীপঙ্কর দাস এর উদ্যোগে “বাতিঘর” এখন বইপ্রেমিকদের আড্ডাখানা। বিশাল পরিসরে লাখো বইয়ের সম্ভার নিয়ে মুঘল নিদর্শন লালবাগ কেল্লার আদলে তৈরি বাতিঘর যেন এক বইয়ের সাম্রাজ্য। জ্ঞানের সাম্রাজ্য বা জ্ঞানের জাহাজ এই বাতিঘর এর দুটি শাখা ঢাকা ও চট্রগ্রামে অবস্থিত। বইয়ের সাম্রাজ্য বাতিঘর দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার।
রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আট তলায় ৫০০০ বর্গফুটের বিশাল জায়গা নিয়ে বাতিঘর জ্বালিয়ে রেখেছে তার জ্ঞানের আলো। বইয়ের জগতে আড্ডা দিতে বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারকে নিয়ে চলে যেতে পারেন বাতিঘরে। দেশি-বিদেশি লাখো বইয়ের সম্ভার নিয়ে সাজানো এই বইয়ের বিপণীটিতে ঢুকলে মনে হবে যেন মুঘল সাম্রাজ্যে ঢুকে পড়েছেন। বইয়ের তাকগুলোতেও রয়েছে মুঘল স্থাপত্যের ছোঁয়া। সেলস কর্নারটি সাজানো হয়েছে ফতেহপুর সিক্রির মতো করে, যেখানে বসে গান করতেন সংগীতজ্ঞ তানসেন।পাঠকদের বসার চেয়ারগুলোও সেজেছে মুঘল কায়দায়।চাইলে বন্ধুদের সাথে এক কাপ কফি হাতে নিয়ে দিতে পারেন বইয়ের আড্ডা। শিল্প-সাহিত্য থেকে শুরু করে প্রবন্ধ, ছোটগল্প, কবিতা, উপন্যাস,আত্মজীবনী, ধর্মীয় বই, আত্ম-উন্নয়নমূলক বই, আইন, রান্নার বই, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, মনোবিজ্ঞান, দর্শন, গণিত ও বিজ্ঞান, ভূতের বই, প্রকৃতি, চারুকলা, নাট্যতত্ত্ব, ইতিহাস, সাংবাদিকতা ইত্যাদি ছাড়াও এখানে রয়েছে ইংরেজি বইয়ের বিশাল সম্ভার।বাতিঘর এখন শুধু একটি বই বিপণন কেন্দ্র নয়, বইপ্রেমিকদের ধরণ অনুযায়ী রয়েছে বিভিন্ন সুসজ্জিত কর্নার। রয়েছে লিটল ম্যাগাজিন, সাহিত্য সাময়িকী কর্নার ও ক্যাফে।
শীর্ষেন্দু-সুনীল-সমরেশ কর্নার রয়েছে যেখানে বাংলা সাহিত্যের শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও সমরেশ মজুমদারের রচনাবলী নিয়ে সাজানো।তরুণ প্রজন্মের অন্যতম প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের গল্প, উপন্যাস, রহস্য উপন্যাস নিয়ে সাজানো হয়েছে ‘মুহম্মদ জাফর ইকবাল’ কর্নার।
কবিতা-প্রেমীদের জন্য রয়েছে কবিতা কর্নার যেখানে পেয়ে যাবেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, প্রমুখসহ বাংলার শত কবির কবিতার বই। ঘুরে দেখতে পারেন ভ্রমণ ও প্রবন্ধ কর্নারটি। ভ্রমণ, বাংলা ও বাঙালি ও বিশ্বসভ্যতার বিকাশ, ইতিহাস, সমাজচিন্তা, রাজনীতির নানান বই নিয়ে সাজানো হয়েছে এই কর্নারটি।
বাতিঘর সবসময় দেশীয় প্রকাশনাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বাংলা একাডেমি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, কথাপ্রকাশ, সময় প্রকাশন, বাংলাপ্রকাশ, অবসর ও প্রতীক প্রকাশনা সংস্থার কর্নারের বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে বাতিঘর।
প্রতিদিন সকাল ১০ ঘটিকা থেকে রাত ১০ ঘটিকা পর্যন্ত আপনি যে কোনো সময় ঘুরে আসতে পারেন এই বিশাল বই বিপণন কেন্দ্রে। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী জনাব দীপঙ্কর দাস এর মতে, “আমাদের উদ্যোগটি একটি জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাইলফলক এবং এইভাবে আমরা আমাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবো”।
— আরিফ হোসেন রাজন