তাওসীফ সাদমান তূর্য্য। ১০ বছরের এই ছেলেটি বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তুরস্কে গিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছে তার নাচ দিয়ে। তূর্য্যের বিদেশযাত্রা এটাই প্রথম নয়, সে তার নাচ দেখাতে এর আগে গিয়েছিল মালয়েশিয়ায়।
তূর্য্য তুরস্কে গিয়েছিল গত ১৭ এপ্রিল। একাডেমীর পরিচালক আনজীর লিটনের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের দলে নৃত্যশিল্পী হিসেবে সেখানে গিয়েছিল সে। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিওগুলোর সংগঠন ‘টিআর’ দেশটির নেভশিহির শহরে ৩৯তম আন্তর্জাতিক শিশুউত্সবের আয়োজন করে। ‘টিআর’-এর আমন্ত্রণে বাংলাদেশ ছাড়া আরও ২৫টি দেশের শিশুরা অংশ নেয় এ উত্সবে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সাংস্কৃতিক দলটি তুরস্কে মোট ১২ দিন ছিল। এরমধ্যে অনুষ্ঠান ছিল ৩ দিনের। তুরস্ক থেকে ফেরার পর তূর্য্যের মুখ-চোখে ছিল অসাধারণ এক অভিজ্ঞতার আনন্দের রেশ। খুশিতে ডগমগ তূর্য্য বলছিল ‘এই যে আমার হাতে ঘড়ি দেখছেন, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী এই ঘড়ি উপহার দিয়েছেন। আর প্রেসিডেন্ট দিয়েছেন এই ট্যাব। প্রেসিডেন্ট তো তাঁর সঙ্গে খাওয়ার জন্যও (নৈশভোজ) দাওয়াত দিয়েছিলেন। দেশটি খুব সুন্দর। মানুষও ভালো। আমি যতটুকু বলতে পারি, তার একটু-আধটু ছাড়া কিছুই বোঝে না ওরা। খালি বলে মারহাবা, মারহাবা।’
এই উত্সবে তারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’ এবং লোকগান ‘ঢোল বাজে ঢোল বাজে বাংলাদেশের ঢোল’ গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে। বাংলাদেশের শিশুদের নাচ তুরস্কের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। তাদের নাচ দর্শকদের মুগ্ধ করে। নাচ শেখার আগ্রহ তোমার মাঝে কীভাবে তৈরি হলো? ‘এমন প্রশ্নের জবাবে তূর্য্য বলে, ‘টিভিতে বিভিন্ন নাচের অনুষ্ঠান দেখে দেখে আমার নাচের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। আমি সেই নাচগুলো অনুকরণ করতে চেষ্টা করতাম। তখন আমার বাবা-মা আমার অগোচরে সেগুলো খেয়াল করতেন। নাচের প্রতি আমার আগ্রহ দেখে তাঁরা আমাকে শিশু একাডেমীতে নাচের ক্লাসে ভর্তি করে দেন।
তূর্য্য শুধু নাচেই নয়, সে অভিনয়, আবৃত্তিতেও অসাধারণ। পেয়েছে বিভিন্ন পুরস্কার। সম্প্রতি সে ‘টিরিগিরি টক্কা’ শিরোনামের একটি বিজ্ঞানমুখী শিশুতোষ ধারাবাহিকে মূল চরিত্রগুলোর একটিতে অভিনয় করেছে।
তাওসীফ সাদমান তূর্য্যের জন্ম ঢাকায়। সে মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার পাটকেল ঘাটা থানার কুমিরা গ্রামে। তূর্য্যের বাবা আশিকুর রহমান শিক্ষকতা করেন রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলে। মা রোকসানা আক্তারও শিক্ষক।
নতুন যারা তোমার মতো বিভিন্ন দেশে নিজের প্রতিভা দেখাতে যেতে চায় তাদের কী করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে তূর্য্য বলে, যারা নাচে আগ্রহী তাদের নাচ নিয়ে চর্চা করা দরকার। যারা গানের প্রতি আগ্রহী তারা গান নিয়ে। তবে সবকিছুই গুরুত্ব দিয়ে করা দরকার। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান করা হয়। পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত চোখ রাখলেই এসবের খোঁজ পাওয়া সম্ভব।
Comments are closed.