spot_img
More
    Homeছোটদের লেখালেখিআরোহীকে খুঁজে পাওয়া

    আরোহীকে খুঁজে পাওয়া

    আরোহীকে খুঁজে পাওয়া
    পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে একটি ছোট মেয়ে দাঁড়িয়ে

    আরোহীকে খুঁজে পাওয়া । ধানমন্ডী লেক -এ একা একা হাঁটছে তরুন । এস.এস.সি পরীক্ষার পর আর স্কুল বন্ধুদের কারো সাথেই দেখা হয় নি। আজ তাদের সাথে দেখা করার কথা । এক সপ্তাহ থেকে দেখা করার জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছিল । শুরু থেকে সবাই অনেক আগ্রহী ছিল। কিন্তু আজ কারো দেখা নাই। ঢাকায় এসে গত চার বছরে সবাই নিজ নিজ জীবনে নিয়ে নিজের মতো করেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কোচিং শেষ করে বের হয়ে সবাইকে কল দিল। কিন্তু সবার কথা শুনে বুঝলো এতদিনের বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা সবই স্বার্থের প্রয়োজনে ,স্বার্থ ফুরালেই বন্ধত্বের সম্পর্ক আর ভালোবাসা সবই মলিন হয়ে যায়। আনমনা হয়ে হাঁটাতে হাঁটতে আর এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ল রবীন্দ্র সরোবরে তা খেয়ালই করে নি।

    আরোহীকে খুঁজে পাওয়া
    ভাইয়া একটা মালা নিবা

    পাকেন বারবার ভাইয়া ডাকটা শুনে বাস্তবে ফিরে আসল। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে একটি ছোট মেয়ে দাঁড়িয়ে । গায়ে ময়লা জামা-কাপড়, উসকো খুসকো চুল ,ধুলোমলিন পা আর হাতে কয়েকটা বকুল ফুল আর রজনীগন্ধা ফুলের মালা। পাশ ফিরে তাকাতেই বলে উঠল ,“ভাইয়া একটা মালা নিবা?” ভাইয়া ডাকটা শুনে আরোহীর মুখটা ভেটে উঠলো। ওর সেই দুষ্টুমি আর খুনসুটি সবাই চোখের সমনে ভাসতে লাগল। মেয়েটি আবার বলে উঠল “ভাইয়া নাও না একটা ফুল । ভাবীরে দিলে অনেক খুশি হইব আর আমারও খাবার কিনার জন্য কিছু টাকা হইব ”ভাবীর কথা শুনে হাসি পেলেও শেষ কথাগুলো তরুনের বুকে তীরের ফলার মতো বিঁধল। দেখেই মনে হচ্ছিল সকাল থেকে কিছু খায় নি । মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছিল না মেয়েটির । মেয়েটির প্রতি খুব মায়া হল তরুণের । তাই তাকে কাছে নিয়ে বলল ,“কিনবতো,আগে বলতো তোর নাম কি?” মেয়েটি বলল “ সবাইতো পিচ্চি, ছেরি, বইলা ডাকে”। আরে তারপর ও তোর নিজের নাম কী?” “জানি না। ছোট বেলায় বাবা -মা হারায়া গেছে।বুঝতে শিখার পর থেকে সবাই এইসব নামেই ডাকতে শুনি।”হঠাৎ করে মেয়েটি ব্যস্ত হয়ে বলল ,“তুমি ফুলের মালা নিবা কিনা বলো। না -হয় আমি যাই ।”তরুন বলল “আরে দাড়া । দে তোর মালাগুলো । তোর ভাবী তো নাই । দেখি আমার কোনো বোনকে দিতে পারি কিনা !”এই বলে মেয়েটির হাত থেকে সবগুলো মালা নিয়ে তারই হাতে আর মাথায় পরিয়ে দিল তরুন । দেখল খুশিতে টলমল করছিল মেয়েটির চোখ ,প্রান খুলে হাসতে লাগল সে অবিরাম খুশিতে । কিন্তু এই হাসি বেশিক্ষণের হলো না । হঠাৎ -ই মুখ থুবড়ে পড়ে পড়ে গেল মেয়েটি। নাক দিয়ে তার অঝর ধারায় রক্ত পড়তে লাগল। রক্ত পড়া বন্ধই হচ্ছিল না। ছেলেটি কিছুই বুঝতে পারছিল না কি করবে। পরক্ষণেই কিছু না ভেবে মেয়েটিকে কোলে করে নিয়ে গেল হাসপাতালে। ডাক্তার তৎক্ষনাৎ তাকে দুটি টেস্ট করানোর জন্য বলেন। টেস্ট করতে পাঁচ হাজার টাকা লাগবে। কোথায় পাবে তরুন এত টাকা ছিল না। হঠাত তার মনে পড়ল একসময় টাকার অভাবেই বাঁচতে পারেনি তার হিমোপ্লোবিয়ায় আক্রান্ত ছোট বোনকে। কিন্তু এই মেয়েটিকে সে মরে যেতে দিবে না। যেভাবেই হোক সে মেয়েটিকে বাচাবেই। মেয়েটির মধ্যেই তো সে তার বোনকে খুজে পেয়েছে। একবার আরোহীকে হরিয়েছে আবার হারাতে দেবে না সে। তার গলায় আরোহীর পরিয়ে দেওয়া একটা চেইন ছিল । তরুন আপন মনে বলল, “তোর পরিয়ে দেওয়া চেইন দিয়েই আজ বাচাবো তোকে। সে দিন তোর কাছে ছিলাম না বলে তোকে হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এখন তোর কাছে আমি। এখন আর তোকে আমায় ছেড়ে যেতে দেব না।” ভেবেই দ্রুত তরুন চেইন টা বিক্রি করে মেয়েটির টেস্ট করালো । রিপোর্ট ডাক্তারকে দেখিয়ে জানতে পারল মেয়েটির ও হিমোপ্লোবিয়া ।

    বোনের সকল স্মৃতি একে একে ফুটে  উঠল মেয়েটির মধ্যে। রক্ত বন্ধ করানোর জন্য ডাক্তারের কথা মতো তাকে ইনজেকশন দেওয়া হল । সেকি কান্নাকাটি তার। দিবেই না সে ইনজেকশন দেওয়া হলে তরুন বলে,“পাগলি বোন আমার । এত ভয় পেতে হয় নাকি।” মেয়েটি মুচকি হাসল । তখন তরুন বলল ,“আজ হতে তুই আর ফুল বিক্রি করবি না। আমার সাথে তুই এখন যবি আমার মায়ের কাছে। আর আজ থেকে আমাদের সাথেই থাকবি আমার ছোট বোন হয়ে । তা অনেক খানি অবাক হয়ে মেয়েটি বলল ,“তোমার সাথে যাবে বোন? আর তোমাদের সাথেই বা থাকবো কেন? ” হাসি কান্না জড়ানো মুখ নিয়ে বললো ,পরের বার ইনজেকশন দেওয়ার সময় যাতে এভাবেই তোর এই ভাইটাকে জড়িয়ে ধরতে পারিস।” জল ছলছলে চোখে খুশিতে মেয়েটি তরুনকে জড়িয়ে ধরে বলল ,সত্যিই তুমি আনেক ভালো গো” ইশ! এভাবে বললেতো হবে না। শুন ,তোকে আমি আরোহী বলে ডাকব। আর তুই জোরে তার জবাব দিবি।” “ঠিক আছে।” আরোহী মেয়েটি প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলো । “কি হয়েছে রে মিষ্টি ভাইয়া” তারপর আবেগের জলে ভেসে গেল দুজনই । তরুন বললো “চল তো এবার। তাড়াতাড়ি মায়ের কাছে যেতে হবে। মা তোকে দেখে অনেক খুশি হবে।” আর মনে মনে ভাবলে, “আমার ছোট্টমনি , তিন বছর আগে এই শহরের দানবীয় হানা আমায় তোকে বাঁচতে দেয়নি। তবে আজকের এই ব্যস্ত শহরে তোকে এই বেনটির মাঝে খুঁঝে পেয়েছি । আর কখনো তোকে হারিয়ে যেতে দেব না রে।”                      

    লেখা   : তোসরিফা জাহান ; ঢাকা সিটি কলেজ ; একাদশ শ্রেণী

    অনুর্ধ্ব আঠারো লেখক সন্ধান- ২০১৯ ; গল্প ; উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ


    আরো পড়ুনঃ শেষ গল্প

    মালিহা নামলাহ
    মালিহা নামলাহhttps://www.chotoderbondhu.com/
    উপসম্পাদক ও প্রধান সমন্বয়ক
    RELATED ARTICLES

    1 COMMENT

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Most Popular